তাপমাত্রা আরও কমে যাবার শংকা

শৈত্যপ্রবাহে জুবুথুবু রাজশাহীর জনজীবন

মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৩২; আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৩

রাজশাহীতে তীব্র কুয়াশা পড়ছে। পানি আর কুয়াশা থেকে নদীর তীরকে  আলাদা করে চেনার উপায় নেই। নগরীর পদ্মা নদীর টি বাঁধ থেকে বেলা ১১ টার  দিকে ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন সৌহরাব হোসেন সোহরাব

শৈত্যপ্রবাহে জবুথুবু হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন। শীতে বিশেষত নাকাল অবস্থায় রয়েছেন শ্রমজীবী-ছিন্নমূল মানুষ। হঠাৎ জেঁকে বসা হাড় কাঁপানো শীতের দুর্ভোগ নেমে এসেছে তাদের উপর। পাশাপাশি কাহিল হয়ে পড়েছে গবাদি পশু-পাখিও।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজশাহীতেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এখানে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ আর মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। গত দুইদিনের ব্যবধানে মোট চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ০৬ জানুয়ারি ভোরে রাজশাহী অঞ্চলে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকলে তাকে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সে হিসাবে বলা হয়, রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে রাজশাহীতে তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও আবহাওয়া পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, দেশে গত শুক্রবার থেকে যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তা আরো দুই দিন থাকতে পারে।

রাজশাহীতে গত দু’দিন থেকে সকালে চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে রোদও উঠেছে। কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবাহ চলমান রয়েছে। যার কারণে বিশেষত তীব্র শীতে নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা পাবার চেষ্টা করছেন শ্রমজীবি মানুষ। তাদের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখি শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে। তবে তীব্র শীত উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকরা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরইমধ্যে নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এরইমধ্যে চারটি ওয়ার্ডে রুম হিটার লাগানো হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের প্রস্তুতি থাকায় চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

এদিকে শীতের তীব্রতাই নগরীসহ রাজশাহী অঞ্চলের হাট-বাজারে গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়েছে। শীতবস্ত্র কিনতে প্রতিদিনই ফুটপাতে নিম্নআয়ের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। তবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা যেতে পারছেন না কোনো দোকানেই। অনেকেই তাকিয়ে আছেন সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহায়তার দিকে। তবে এরইমধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে।

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিস জানায়, তাদের হাতে থাকা ৫৪ হাজার কম্বল এরইমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শীতার্তদের হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। সিটি করর্পোরেশন এলাকায়ও প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top