মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে
বৃষ্টির অযুহাতে রাজশাহীতে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার
মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৯:১৩; আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩৬

বৃষ্টির অযুহাতে রাজশাহীতে লাগামহীন সবজির বাজার। বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নগরবাসী। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, আগের মতো আর ৫’শ-৬’শ টাকায় সপ্তাহের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অন্তত ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা না হলে সবজি-ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করাই যেন কষ্টসাধ্য।
চলতি বছর রাজশাহীতে বর্ষাকালের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আষাঢ় মাসের প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। শ্রাবণ মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। অতিবৃষ্টির কারণে খেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ়ের শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি ৯১ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয়। শ্রাবণ মাসেও প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির কেজি মূল্য বেড়েছে ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়েরর মানুষরা বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। সবজির দাম বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে ব্যবসায়ীরা দাবী করছেন। তাদের মতে টানা বর্ষণে মাঠে উৎপাদন কমে যাবার কারণে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। আবার অনেক ক্রেতা বলছেন, প্রকৃত সংকট থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, আগের মতো আর ৫’শ-৬’শ টাকায় সপ্তাহের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অন্তত ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা না হলে সবজি-ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করাই যেন কষ্টসাধ্য।
সরজমিনে মহানগীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি যে দামে বিক্রি করা হয়েছে তার থেকে প্রত্যেকটি সবজির দাম ৩০টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির ধরণ অনুযায়ী কোনো কোনো সবজির দাম বেড়েছে ২/৩ গুণ। তারপরও প্রয়োজনীয় হওয়ায় অল্প সবজি নিয়ে বাসায় ফিরছেন ক্রেতারা। মহানগরীর লক্ষীপুর কাঁচাবাজারে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করলা বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। অথচ করলা আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। ঝিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কয়দিন আগে ঝিঙ্গা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কেজেতে পটলের বেড়ে হয়ে ৬০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ ধরন ভেদে প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আবার ৩০-৩৫ টাকা কেজির বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। এছাড়াও পেঁপে, এবং বিভিন্ন ধরণের শাক যেমন, সবজু ও লাল শাক, পুঁই শাকসহ অন্যান্য শাকের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজির মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পেঁয়াজ আগে ৫০/৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও বড় সাইজের রসুনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। লাল ডিম ৫০ টাকা ও সাদা ডিম ৪৬ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
আটার দামও কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। মসুর ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৮০-৮৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি স্থানভেদে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩’শ থেকে ৩৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস আগের মতোই ১১’শ থেকে ১২’শ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। আকার ও মানভেদে অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। চাষের কই ২৮০-৩’শ টাকার নিচে মিলছে না। আকার ও মানভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬’শ টাকা কেজি। আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬’শ-৮’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, অন্য জাতের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও রুপচাঁদার কেজি ১ হাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ক্রেতা সাধারণ দ্রুত দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: