উত্থান তত্ত্ব: সাধারণের সংমিশ্রনে বিস্ময়কর সৃষ্টি

ব্যারিস্টার রহিমা হক | প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০২১ ০০:১৪; আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩১

পিঁপড়ার কোন ইচ্ছা শক্তি নেই, অনেক ব্রেইন নেই, প্লান নেই তবু তারা নিজেদের একটা কলনী তৈরী করে। স্টুপিড পিঁপড়ারা নিজের মধ্যে জটিল একটা নেটওয়ার্ক তৈরী করে। স্টুপিড পিঁপড়ারা একসাথে বেশ বুদ্ধিমানের কাজ করে। এরা সারিবদ্ধভাবে কাজ করে। কেউ কলনী ছত্রাকময় করে রাখে, কেউ বাচ্চাদের দেখে কেউ প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেয়।

ছোট ছোট অংশ মিলে একটা বিরাট বস্তুর তৈরী হয়। এটি হচ্ছে উত্থান তত্ত্ব। পানির সৃষ্টিকেই দেখা যাক, বৃষ্টিতে ভিজলে কাপড় ভেজা দেখায়। কিন্তু খুব কাছ থেকে অবলোকন করলে দেখা যায়। একটা অণু অন্য অনেক অণুর সাথে মিশে আছে। পানি আসলে কি? একটা অণুর সাথে কয়েকটা অণু মিলে তার পর আরো কিছু। এতে নতুন একটা অস্তিত্ব তৈরী করে। আশে পাশের কিছু অস্তিত্ব বা বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে মূল বস্তুটি পুরোপুরি ভিন্ন একটি বস্তুতে পরিনত হয়। এভাবে নতুন তৈরী হওয়া জিনিসটা আবার নতুন আরেকটা বস্তুর সংমিশ্রনে এসে ভিন্ন আরেকটি জিনিস হয়। যেমন একটি স্তরের উপর অন্য একটি স্তর।

অণু মিলে তৈরী হয় প্রোটিন। প্রোটিন তৈরী করে কোষ। কয়েকটি কোষ মিলে হয় অঙ্গ। আবার অনেক অঙ্গ মিলে হয় একটি মানব সত্ত্বা। এক একজন ব্যক্তি মিলে হয় সমাজ। কিন্তু কিভাবে এধরনের জটিল অস্তিত্ত্ব তৈরী হয়? কিভাবে কতগুলো বোকা পিঁপড়া মিলে একটি শক্তিশালী কলোনী তৈরী করে?

উত্থান তত্ত্বের ব্যাখ্যা বুঝতে পিঁপড়ারা কি করে কাজ করে চলুন দেখি। ধরে নেই একটি কলোনীর ২৫% পিঁপড়া হলো কর্মী, ২৫% পিঁপড়া হলো তত্ত্বাবধায়ক, ২৫% সৈন্য আর ২৫% হলো দলবদ্ধ গোষ্ঠী।

শ্রমজীবী পিঁপড়া ক্যামিকাল ছড়াতে ছড়াতে চলে আর তত্ত্বাবধায়ক পিঁপড়ার সাথে দেখা করে এবং তথ্য আদান প্রদান করে। ধরে নিলাম হঠাৎ পিঁপড়া খেকো প্রানী এসে অনেক পিঁপড়াকে মেরে ফেললো। এখন দলবদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্য কমে গেলো। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না গেলে এদের মধ্যে অনেকে না খেয়ে মারা যাবে। আর দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করতে হলে এতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পিঁপড়াদের কিভাবে খবর পাঠানো হবে? উত্তর হলো, খবর পাঠাতে হবে না। এই পরিস্থিতিতেও কিছু পিঁপড়া একে অন্যের সাথে দেখা করবে। কর্মী পিঁপড়ার কিছু এখন দলবদ্ধগোষ্ঠীর অংশ হবে। যতক্ষন দলবদ্ধগোষ্ঠীর দলটি ঠিক না হচ্ছে ততক্ষন কর্মী পিঁপড়ারা দলবদ্ধগোষ্ঠী হয়ে কাজ করবে। প্রতিটি শ্রেনী আবার একটি ব্যালেন্সে চলে আসবে। নিজেদের মধ্য দায়িত্ব আদান প্রদান করে তারা তাদের কাজ করে। খুব যে পরিকল্পিত ভাবে করে তা কিন্তু না। নিয়ম শৃঙ্খলা তৈরী আছে। প্রয়োজনে তারা তা মানে। কলোনীতে এভাবে প্রয়োজনে উত্থানের তত্ত্ব কাজ করে।

মানুষের শরীরিক গঠন তন্ত্রেও আছে উত্থান তত্ত্ব। জীবন্ত নয় এমন পরিবেশ বা বস্তু থেকে একটা জীবন্ত বস্তু। অটম তার পর অণু, অণু থেকে প্রোটিন, প্রোটিন থেকে অঙ্গ আবার এগুলো মিলে জটিল অঙ্গ। অঙ্গ থেকে একটি প্রাণীতে পরিনত হয়। হাত, হৃৎপিন্ড, পা সব জটিল কাজ করে, করতে থাকে। আর আমরা সব কাজ নিজেদের মতো করি খাবার খাই, টিভি দেখি।

পেইস মেকার। মিলিয়ন বিটার মিলে কাজ করে আর তৈরী করে হার্টবিট বা হৃদকম্পন। একটা কোষ অন্য কোষে ক্যামিকাল রিয়েকশন দেয়। একটা কোষ তার প্রতিবেশী কোষে কাজ আদান প্রদান করে। কোন সুনির্দিষ্ট একটি জায়গা হতে এখানে নির্দেশনা আসে না। একটা ইউনিট অন্য প্রতিবেশী ইউনিটকে খবর দেয়, সেই অনুযায়ী অন্য ইউনিট কাজ করে।
এখন যদি চিন্তা করি আমাদের চেতনা শক্তি কি করে কাজ করে? এখানে কি উত্থান তত্ত্ব কাজ করে? আমাদের সেল আর ব্রেইন মিলেই কি এই উত্থান তত্ত্ব কাজ করে? এটি অনেক বড় একটি ক্ষেত্র যা বর্ননা করতে আলাদা করে বলতে হবে।

আমরা পিঁপড়ার কলোনী ধ্বংশ করতে পারি না। কেবল এর অংশবিশেষ ধ্বংশ করি। কলোনীর কোন ব্রেইন নেই, শরীর নেই তবু সে পৃথিবীর সাথে লড়ে, যেমন মানুষ থেকে একটি জাতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু কি এই জাতি? এগুলো কি কেবল লোকালয়, বা পরিসীমা বা জাতীয় সঙ্গীত? কি একটি জাতি তৈরী করে? প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ হয়, শহর তৈরী হয় আবার ধ্বংশ হয়। সীমানা ইতিহাসের সাথে বদলায়, চিহ্ন বদলায়।

জাতির তো অবকাঠামো নেই, চেহারা নেই। তাহলে কি এর অস্তিত্ব নেই? অবশ্যই আছে। যেমন পিঁপড়ারা পৃথিবীতে মিলামেশা করে। সীমানা পরিবর্তন হতে পারে, বহু কিছু পরিবর্তন হয় তবু জাতির অস্তিত্ব থাকে কারণ অনেক মানুষ একে অন্যের সাথে মেলামেশা করে, আদান প্রদান করে। আমরা হয়তো খেয়াল করি না কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত সৃষ্টিতে লিপ্ত থাকি। কলনী, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী। প্রতিটা জটিল প্রতিষ্ঠান কোন স্টুপিড অস্তিত্ব থেকে হচ্ছে। িআমরা হয়তো সুনির্দিষ্ট ভাবে জানি না এটি কি করে এবং কেন হয়? কিন্তু এটি আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কার্যকলাপ।

বিষয়টাকে এখন যদি একটু অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করি। উই এ রাজীব স্যার যখন হাল ধরলেন এখানে কোন নামীদামি ব্রান্ড আনা হয়নি, সাধারণ কয়েকজন নারী মিলে কাজ করছিলো। কিছু পুরুষও যুক্ত হয়। সবাই নিজের মত কাজ করে। একে অন্যকে তার কর্মক্ষেত্রের পণ্যের বিষয়ে লিখিত ভাবে জানায়। শীতে ওয়েভ শুরু হয় শাল, পিঠা, গুড় এগুলো নিয়ে। আবার ফাল্গুনে শাড়ী গহনার ওয়েভ। গরমে আম লিচু চলবে। এভাবে সময়ের প্রয়োজনে এক একটা বিষয়ের ওয়েভ চলছে। আর উদ্যোক্তারা কাজ করছে। কারোর তেমন কোন পরিচয় ছিলো না। অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে তখন নিজেকে তৈরী করে ফেলি। কিন্তু দলবদ্ধভাবে কাজ করে তারা একটি দেশী পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করেছে। রাজীব আহমেদ মূল নির্দেশক না, তিনি সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন না। তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম তৈরী করে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সবাই কাজ করছে। কোন জায়গা খালি হলে নিজের মেধা শ্রম দিয়ে সেখানে বসছে অন্য আরেকজন। এভাবে একগুচ্ছ সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও শৃঙ্খলা দেশী পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির উত্থান করেছে।

(লেখাটি ইউটিউব ভিডিও অবলম্বনে রচিত)

লেখক: ব্যারিস্টার রহিমা হক
প্রতিষ্ঠাতা, আইন সেবা
ইমেইল: [email protected]

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top