সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী

২০২১-২২ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ হাজার ৯৬১ মিলিয়ন ডলার

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০২৩ ০৭:৩৩; আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৪৯

ছবি: সংগৃহিত

জাতীয় সংসদে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির তথ্য তুলে ধরেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ হাজার ৯৬০ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ২৯ হাজার ৫২৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। খবর বণিক বার্তার। 

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে টেবিলে প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করা হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী প্রধান প্রধান বাণিজ্য ঘাটতির কয়েকটি দেশের নাম জানান সংসদে। তিনি জানান চীনে থেকে আমদানি করা হয় ১৮ হাজার ৫০৯ মিলিয়ন ডলার। রফতানি করা হয় ৬শত ৮৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ হাজার ৮২৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে আমদানির ১৩ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার বিপরীতে এক হাজার ৯৯১ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার রফতানি করা হয়। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১১ হাজার ৬৯৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া অন্য প্রধান বাণিজ্য ঘাটতির দেশগুলো হল সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, থাইল্যান্ড, দ. কোরিয়া, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী। নিত্যপণ্যের মধ্যে একমাত্র আলু উৎপাদন করে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা যায়। বাকি অন্য নিত্য পণ্যের চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।সরকার দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী এ কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে টেবিলে প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করা হয়।

দিদারুল আলম তার প্রশ্নে দেশে প্রতিবছর কি পরিমাণ চাল, গম, আলু, পেঁয়াজসহ ১০টি নিত্যপণ্য দেশে কি পরিমাণ উৎপাদিত হয় এবং চাহিদা পূরণে কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে জানতে চান তিনি। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান দেশে আলুর বাৎসরিক চাহিদা ৮৮ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ১ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টন। প্রক্রিয়াজাতকরণে উৎপাদিত আলুর ২৫ শতাংশ নষ্ট হয় বলেও জানান তিনি।

দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫২ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ৩ কোটি ৫১ লাখ টন। চাহিদা পূরণে ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয়। গমের উৎপাদন ১০ লাখ ৮৬ হাজার টন। চাহিদা রয়েছে ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার টন। চাহিদা পূরণে সিআেইএসভুক্ত দেশ সমূহ কানাডা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়।

ভোজ্য তেলের বাৎসরিক চাহিদা ২০ লাখ টন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হয় ২ লাখ ১৭ হাজার টন। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়।

ডালের বাৎসরিক চাহিদা ৩৩ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত হয় ৮ লাখ ৩৮ হাজার টন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, নেপাল ও তুরস্ক থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। দুধের বাৎসরিক চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদা পূরণে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দুবাই, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়।

পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা ২৫ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ায় চাহিদা পূরণে ভারত, মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা হয়।

রসুনের চাহিদা ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৭০ হাজার টন। উৎপাদিত রসুনের ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করণে ক্ষতি হওয়ায় চাহিদা পূরণে ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। আদার বাৎসরিক চাহিদা ৩ লাখ টন, দেশে উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৯২ হাজার টন। ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। ভুট্টার বাৎসরিক চাহিদা ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার টন। দেশে উৎপাদিত হয় ৫৬ লাখ ৩০ হাজার টন। চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, তুরস্ক, ভারত ও সিআইএসভুক্ত দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

করোনাকালে ৪ লাখ ৪৩ হাজার প্রবাসী ফেরত এসেছে

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের হিসাব মতে করোনাকালে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯০২ জন প্রবাসী আউট পাশ নিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান, বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের আর্থ সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭০৬ জনকে ৪২৯ কোটি ৫৯ কোটি পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫২ হাজার ৭৪ জনকে বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ১ হাজার ১০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা অভিবাসন ঋণ দেয়া হয়েছে।

১৮ লাখ ৫৯ হাজার খাদ্য শস্য মজুদ

চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত দেশের সরকারি খাদ্য গুদামে ১৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৩ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে খাদ্য মন্ত্রী জানান এর মধ্যে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৪ টন গম, ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২১ টন চাল এবং এক হাজার ৩৮১ টন ধান মজুদ আছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩ লাখ টন ধান ও ৫ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে এক হাজার ৬ মেট্রিক টন ধান ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার ৯৯০ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা সরকারের রয়েছে। এর মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার হতে ইতিমধ্যে ৭ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৭ হাজার টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে।

বেসরকারি পর্যায়ে ৪৩১ টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৫৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি সরকার দিয়েছে বলে জানান খাদ্য মন্ত্রী।

চলতি অর্থবছরে ৬ লাখ ৫০ হাজার লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য জি টু জি পদ্ধতিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন ও বুলগেরিয়া হতে আমদানির কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ লাখ ২৮ হাজার টন গম সরকারি গুদামে আছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top