আলু পেঁয়াজের সরকারি দর কার্যকর হয়নি দুই সপ্তাহেও
রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৫; আপডেট: ১ মে ২০২৫ ১৬:৩৭

দুই সপ্তাহ আগে সরকার আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। এখনো বাজারে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কার্যকর হয়নি। ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল বাজারের তখনকার দরের সামান্য কম। এখন কোনো কোনো বাজারে সেই দরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে ছোট বাজার ও পাড়ার মুদিদোকানে বাড়তি দামেই ডিম বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে তাতে কাজ হচ্ছে না। বরং সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হওয়ার অভিযোগ উঠছে।
আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের বাইরে চিনি, সয়াবিন তেল ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নির্ধারিত দর রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে, চিনি ও এলপিজি নয়।
রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন বাজার ঘুরে গতকাল বুধবার দেখা যায়, আলু কিনতে ক্রেতাদের দিতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। যদিও নির্ধারিত দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। দেশি পেঁয়াজের নির্ধারিত দর ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। যদিও বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি। ডিমের দাম কোথাও কোথাও প্রতি হালি ৪৮ টাকা, কোথাও কোথাও ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সরকার নির্ধারিত দর ৪৮ টাকা।
বাজারগুলোতে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। যদিও নির্ধারিত দর ১৩০ টাকা। ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা। যদিও সরকার নির্ধারিত দর ১ হাজার ২৮৪ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের ফলে বাজারে নতুন করে দাম বাড়েনি। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। তিনি বলেন, ঢাকায় ডিমের দাম কমেছে। আলুর ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আছে। দেশি পেঁয়াজের দাম সেই তুলনায় কম কমেছে। বাজারে অভিযান চলমান থাকবে।
দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার (আগস্ট মাসে) খবর আসার পর ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ওই দিন আগের ধারাবাহিকতায় সয়াবিন তেলের নতুন দাম জানানো হয়, যা আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারপ্রতি ৫ টাকা কম। চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল আগস্ট মাসে। আর প্রতি মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপিজির দাম ঠিক করে দেয়।
বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কার্যকর হতে দেখা গেছে। কিন্তু চিনি নির্ধারিত দরে কখনোই বিক্রি হয়নি। এলপিজিও না। এবার দেখা যাচ্ছে, দাম কার্যকর না হওয়ার তালিকায় পেঁয়াজ, ডিম ও আলুও ঢুকছে।
ঢাকার পলাশী বাজারের সাবিহা স্টোরের বিক্রেতা রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলু ও পেঁয়াজের দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। আগের মতোই আছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে কমে কিনতে পারছি না। এ জন্য খুচরায়ও দাম কমছে না।’
ঢাকার বাইরে গতকাল রংপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, নোয়াখালী, ফরিদপুর, সিলেট, ঠাকুরগাঁও, খুলনা ও রাজশাহী জেলা শহরে বাজারদর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা গেছে, কোথাও আলু, পেঁয়াজ ও চিনির দাম কার্যকর হয়নি। ডিম কোথাও কোথাও হালি ৪৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য ডিমের দাম এত বেশি নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কুষ্টিয়ার জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে অভিযানের সময় দাম কমে। পরে আবার বেড়ে যায়। রোববার থেকে আবার অভিযান চলবে।
শুধু ডিম, আলু বা পেঁয়াজ নয়, বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দামই। যে চাষের পাঙাশের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে থাকত, তা এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারে গতকাল দুপুরে বাজার করছিলেন আকলিমা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাগো মতো মানুষ খাইব কী। মাছ-মাংসের কথা বাদ দেন, সবজিরও তো দাম কমে না।’
রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকার বাসিন্দা রাজশাহী কলেজশিক্ষার্থী বর্ণা আক্তার গিয়েছিলেন স্থানীয় বাজারে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে গোল বেগুনের দাম ছিল কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এখন সেটা ৭০ টাকা। অন্যান্য পণ্যের দামও বেশি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: