মুখ থুবড়ে পড়েছে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান
রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:২৩; আপডেট: ১ মে ২০২৫ ১৬:৩৯

এ বছর মিলারদের কাছে ৩ লাখ ১৬ হাজার টন চাল আর কৃষকদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত মে মাসে রংপুর বিভাগে শুরু হয় সরকারের বোরো সংগ্রহ অভিযান। দুদফা সময় বাড়িয়েও শতভাগ ধানচাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রংপুর খাদ্য বিভাগ।
দুদফায় বাড়ানো হয়েছে চালের লক্ষ্যমাত্রা। সবশেষ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৩ টন। মিলাররা নানা কারণে বাধ্য হয়ে চাল দিলেও কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি ধান।
যদিও মিলাররা বলছেন, লোকশান হলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই সরকারকে চাল দিয়েছেন তারা।
রংপুর মাহিগঞ্জ অটো রাইস মিলের ম্যানেজার আব্দুল মতিন জানান, সরকার ৪৪ টাকা চালের দাম নির্ধারণ দিয়েছে। বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পরে প্রায় ৪৮-৫০ টাকা। তাতে আমাদের ক্ষতি হয়। তারপরও ব্যাংক ঋণের কারণে আমরা বাধ্য হয়েই সরকারকে চাল দিয়েছি।
রংপুর আলম অটো রাইস মিলের পরিচালক লোকমান হোসেন বলেন, তিন দফায় আমার মিল থেকে প্রায় দেড় হাজার টন চাল নেয় সরকার। প্রথম দফায় চাল সরবরাহে কিছুটা লাভ হলেও পরের দুদফায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন ধানের অভাবে আমার মিল বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৬ শতাংশ। ৮ হাজার ৬২ টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ১ হাজার ২৬২ টন।
কৃষকরা বলছে, সংগ্রহ প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ধান দিতে পায় না তারা। একইসঙ্গে দালাল ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বঞ্চিত হন। আর শুরু থেকেই ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি ছিল কৃষকদের।
জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, সরকার যে পরিমাণ ধানচাল সংগ্রহ করে তা উৎপাদনের তুলনায় একেবারেই কম। প্রান্তিক কৃষকদের কথা বিবেচনায় রেখে ধান সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও সহজ করাসহ উপজেলা পর্যায়ে পেডি সাইলো নির্মাণের দাবিও এই কৃষক নেতার।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘ভালো দাম দেয়ায় গেল বারের তুলনায় এবার বেড়েছে সংগ্রহের পরিমাণ। সরকার দুটো বিষয় লক্ষ্য রেখে ধানের সংগ্রহ মূল্যটা নির্ধারণ করে। একটা হলো নিরাপদ মজুত গড়ে তোলা। পাশাপাশি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। সরকার যদি ন্যায্য মূল্য ঘোষণা করে সেখানে বাজারটাও কিছুটা রাইজ থাকে এবং কৃষকরা লাভবান হয়। আমরা সেই জন্য ধান কম কিনেছি কিন্তু শতভাগ চাল কিনেছি। আমরা চাই কৃষকদের জন্য যেহেতু সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কৃষকরাই এখানে উপকৃত হোক। মাঝখান থেকে কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো ফড়িয়া কৃষকদের নাম বলে ধান দিয়ে এ সুবিধাটা না নেয়। এ জন্য আমরা শেষের দিকে ধান কেনার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছি। তবে কোনো প্রকৃত কৃষক এলে তাকে আমরা বঞ্চিত করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলে ২ লাখ ৮৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম আছে। যেহেতু রংপুর অঞ্চল উৎপাদন এবং সংগ্রহ প্রবণ এলাকা এবং কৃষিতে উদ্বৃত্ত থাকে তাই আমার ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে আমরা সিএসডি গুদাম ও সাইলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই রংপুর বিভাগে খাদ্য সংগ্রহের ধারব ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’
রংপুর বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ ভাগ চাল ও ৭১ ভাগ ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্যবিভাগ। বিভাগের ৯১টি খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ ৮৫ হাজার টন। যা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: