এলসি জালিয়াতিতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২৫; আপডেট: ২ মে ২০২৪ ২০:২৫

ছবি: প্রতীকী

অগ্রণী ব্যাংকের মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর শাখার মাধ্যমে এলসি (ঋণপত্র) খুলে গাড়ি আমদানি করেন আসাদুজ্জামান সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) তাঁর নয়। আদনান এন্টারপ্রাইজের আইআরসি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁকে আমদানির সুযোগ করে দেন ব্যাংকের ওই শাখার তখনকার ব্যবস্থাপক আরকানুল হক।

আবার এলসি মার্জিন (আমদানি পণ্যমূল্যের একটি অংশ) জমা রাখার নিয়ম থাকলেও তিনি কিছুই রাখেননি। আর্থিক সুবিধা নিয়ে অবৈধ এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসার এক পর্যায়ে তিনি আর হিসাব মেলাতে পারেননি। এক পর্যায়ে ধরা পড়ে বিষয়টি।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, গ্রাহকদের এলসি মার্জিনের ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৩১ হাজার ৮৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে তিনি বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করার জন্য সোহাগকে অন্য গ্রাহকের জমা অর্থ থেকে ৭ কোটি টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত ১৬টি এলসি পণ্যের দাম (৯ কোটি টাকার বেশি) পরিশোধ করা হয়নি।

এ ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় আরকানুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাঁকেসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার সমকালকে বলেন, অনৈতিক আর্থিক সুবিধার জন্য অবৈধ এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। মানুষ ভরসা করে ব্যাংকে টাকা রাখেন, সেখানে এমন কাণ্ড ঘটলে তা খুবই উদ্বেগজনক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সোহাগের গাড়ি ব্যবসার অংশীদার বা আর্থিক সুবিধাভোগী ছিলেন আরকানুল। এ কারণে ঝুঁকি সত্ত্বেও অবৈধভাবে এক গ্রাহকের আইআরসি ব্যবহার করে অন্যজনকে সুবিধা দিয়েছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মুক্তারপুরে অনেক ব্যবসায়ীরই আইআরসি নেই। তারা অন্য ব্যবসায়ীর কাগজপত্রে আমদানি করেন।

আদনান এন্টারপ্রাইজের মূল মালিক মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক মালিক ব্রোস বিডির কর্ণধার আসাদুজ্জামান সোহাগের। তিনি মহিউদ্দিনের সম্মতিতেই তাঁর কাগজপত্র দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। গাড়ি বিক্রির টাকা জমা না দেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।

পিবিআইর তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, অগ্রণী ব্যাংকের মুক্তারপুর শাখার এলসি খোলার অনুমতি ছিল না। তারা একই ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জের কোর্ট রোড শাখার মাধ্যমে এলসি খুলে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ২০২০ সালের পর শুরু হয় অনিয়ম। আদনান এন্টারপ্রাইজের মালিকপক্ষকে না জানিয়ে তাদের আইআরসি দিয়ে এলসি খুলতে শুরু করেন ব্যবস্থাপক।

পরে কোর্ট রোড শাখা এলসির মূল্য বাবদ আইবিডিএ (ইন্টার ব্রাঞ্চ ডেবিট অ্যাডভাইস) পাঠালে পর্যাপ্ত মার্জিন না থাকায় আরকানুল সমন্বয় করতে পারেননি। এ নিয়ে তিনি কালক্ষেপণ করলে ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি দল ওই শাখা পরিদর্শনে যায়। সেখানে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় আরকানুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, বন্দর থেকে খালাসের পর ইমামুল হাসানের মালিকানাধীন সাম্পান অটো থেকে গাড়িগুলো বিক্রি করা হয়। তবে গাড়ি ও গমের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। আরকানুল, ইমামুল ও সোহাগ গত বছরের ৯ মার্চ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করেন, ওই টাকা তারা পরিশোধ করবেন। পরে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আরকানুল ও দুই গ্রাহক ব্যাংকে হাজির হয়ে দাবি করেন, এলসির দায় তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংক মামলা করে। মুন্সীগঞ্জ জেলা পিবিআইর পুলিশ সুপার আনোয়ারুল হক বলেন, তদন্ত শেষে ১ হাজার ৪৫৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই সাইতুল ইসলাম জানান, আদনান এন্টারপ্রাইজের আইআরসি দিয়ে ১৩টি এলসি খুলে ৮ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৯ টাকা এবং আরও তিনটি এলসি খুলে ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকার পণ্য আমদানি করা হয়। যেগুলোর মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। তদন্তে আরকানুল হক ও আসাদুজ্জামান সোহাগের অপরাধের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান সোহাগ দাবি করেন, আমদানি করা গাড়ি এনে সাম্পান অটোর শোরুমে বিক্রি করা হতো। তবে মাঝে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরবর্তী কার্যক্রমে ছিলেন না। সাম্পান অটোর মালিক ইমামুল হাসান গাড়ি বিক্রির টাকা জমা না দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ইমামুল হাসান বলেন, আমার কোনো দায় থাকলে তদন্তেই প্রমাণ হতো। আমাদের গাড়ি বিক্রির সব লেনদেন হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে। কোনো ফাঁকফোকর থাকলে সহজেই ধরা পড়ত। এ ব্যাপারে জানতে আদনান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মহিউদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল ও মেসেজ পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। তবে তাঁর ছেলে আদনান আহমেদ পিবিআইকে বলেছেন, তাঁর আইআরসি দিয়ে পণ্য আমদানির বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না।

 

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top