আয়কর দেয় না ফুডপান্ডা

মাসেই কর ফাঁকি দেন কোটি টাকার বেশি!

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২২; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ০৫:৫১

ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে চার্জ কেটে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও ঠিকমতো আয়কর পরিশোধ করছে না বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডা। প্রতিষ্ঠানটি কমিশনের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ উৎসে কর পরিশোধ করছে না। এর মাধ্যমে তারা প্রতি মাসেই কোটি টাকার বেশি আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে। খবর দৈনিক কালবেলার। 

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি একটি খাবারের অর্ডারের বিপরীতে তিন ধরনের ফি নিচ্ছে। একই সঙ্গে মূল্য পরিশোধের তুলনায় কম খাবার দিচ্ছে। এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দারা অভিযান পরিচালনা করে আড়াই কোটি টাকা আদায় করে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর পরিশোধ করতে হয়। অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো এ অর্থ পরিশোধ করছে না। সর্বশেষ একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর দেওয়ার বিষয়ে বা আইনের স্পষ্টীকরণ করতে এনবিআরের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। এ মতামতে আইন অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, প্রতিটি কমিশনের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর হবে। যারা এ কর পরিশোধ করবে না বা কৌশলে এড়িয়ে যাবে, তারাই ফাঁকি দিচ্ছে। এটাকে স্পষ্ট কর ফাঁকি বলেও মনে করেন এ কর্মকর্তা।

ফুডপান্ডা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৭০ হাজার অর্ডার ডেলিভারি হয় এ প্রতিষ্ঠানের। আর প্রতিষ্ঠানটির কমিশন ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। সেই হিসাবে গড় কমিশন ২০ শতাংশ। তবে তাদের অর্ডারের গড় মূল্য বলেনি সংশ্লিষ্টরা। ফুড ডেলিভারি খাত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুডপান্ডার অর্ডারের গড় মূল্য প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা সমমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করে তারা, যা মাস শেষে দাঁড়ায় ৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে কমিশন বাবদ প্রতিষ্ঠানটি পায় প্রতি মাসে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর মূলত উৎসে কর হবে এ কমিশনের ওপর। এর থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে করের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৭

লাখ টাকা। অর্থাৎ মাস শেষে প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর বাবদ এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যা পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু কর পরিশোধ নয়, ছোট অর্ডারের ক্ষেত্রে খাবারের দাম থেকে কমিশন ফি দ্বিগুণ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় নিউমার্কেটের একজন গ্রাহক লালবাগের ওয়াফাস কাবাব ফ্রন্ট থেকে ফুডপান্ডার মাধ্যমে একটি অর্ডার করেন। এই অর্ডারে তিন ধরনের ফি নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডেলিভারি ফি, স্মল অর্ডার ফি এবং প্ল্যাটফর্ম ফি। ছোট এই অর্ডারের ক্ষেত্রে পণ্যের দামের তুলনায় তিন ধরনের ফি পরিশোধের কারণে খাবারের দাম থেকে দ্বিগুণ বেশি ফি পরিশোধ করতে হয়েছে।

ফুডপান্ডা বাংলাদেশের সিইও আমবারিন রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। কালবেলার পক্ষ থেকে উৎসে কর এবং প্ল্যাটফর্ম চার্জের বিষয়ে প্রশ্ন পাঠালে তার কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শুধু আয়করে নয়, ভ্যাটেও বড় ধরনের অনিয়ম করেছে ফুডপান্ডা। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার দোকান থেকে অর্ডারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ভোক্তার কাছে খাবার সরবরাহ করে ফুডপান্ডা। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফুডপান্ডার চুক্তিও রয়েছে; যার আওতায় ফুডপান্ডা বিভিন্ন হারে কমিশন নেয়। বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ও কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট গোয়েন্দারা। ভ্যাট গোয়েন্দার একটি টিম ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে ভ্যাট গোয়েন্দা দল বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ তল্লাশি করে প্রতিষ্ঠানের মাসিক বিক্রয়ের কিছু গোপন তথ্য পায়। গোয়েন্দারা সেই বিক্রয় তথ্যসহ আরও কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে। এসব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মেলে। পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হলে তা যাচাই করে ভ্যাট গোয়েন্দারা। এতে সুদসহ প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা নির্ধারিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি মেনে নিয়ে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পায়। পরবর্তী সময়ে ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (দক্ষিণ) অনলাইনে রিটার্ন জমার তথ্য আড়াআড়ি যাচাই করে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণেও মেলে ফুডপান্ডার নাম।

জানা যায়, ফুডপান্ডা অনলাইনে খাবার অর্ডার করার বহুজাতিক কোম্পানি। এটির প্রধান সদর দপ্তর জার্মানির বার্লিন শহরে। বর্তমানে ফুডপান্ডা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশে অনলাইনে খাবারের অর্ডার গ্রহণ ও ডেলিভারি করে।

বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, হংকং, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও জাপান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জার্মানির ডেলিভারি হিরো নামক প্রতিষ্ঠানটি ফুডপান্ডা গ্রুপকে কিনে নেয়। বর্তমানে এটি তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশে ফুডপান্ডা সরাসরি নয়, ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশিদের মধ্যে পরিচালিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রয়েছে রাজস্ব সংক্রান্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top