ভয়াবহ হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, ১১ সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩ ২০:৫৪; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৬

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ফোকাস বাংলা

আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বেশি। সেদিক থেকে প্রাক-মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার (২৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এ কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, নগরায়ণের কারণে ঢাকা মহানগরে রোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের পরিসংখ্যান না দেখে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরে ৯ ধরনের গবেষণা করে থাকি। এসব গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখি এবং পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

তিনি জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।

ঢাকা শহরে ব্রাজিলের মতো অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, এর ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি, অথচ এটি সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে ১১টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে:

১. সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু স্ক্রিনিংয়ের চার্জ ১০০ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।

২. ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে আবাসিক চিকিৎসক ও আরএমও এর কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে। যাতে আগত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়।

৩. হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

৪. কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ২৪/৭ ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টারে প্লাটিলেট সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, কোনো রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে উল্লেখিত ২১টি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো. এসব সেন্টারের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, বাংলাদেশ (এনআইসিভিডি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডো), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল (নিনস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহামান মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ।

৫. ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৬. ডেঙ্গু একটি ভেক্টর বাহিত রোগ বিধায় জিও লোকেশন ট্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোবাইল নং এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে।

৭. আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে।

৮. আগ্রহী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

৯. এডিস মশার লার্ভা নিধনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০. বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের এনএস১ অ্যান্টিজেন (সর্বোচ্চ ৫০০টাকা), আইজিজি এবং আইজিএম (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), সিবিসি (সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা) পরীক্ষা সরকারের পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে করতে হবে।

১১. বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী করতে হবে এবং প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখাকে অবহিত করতে হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top