হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্য খেজুরের রস

আব্দুর রাজ্জাক | প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারী ২০২১ ২৩:৩৮; আপডেট: ২১ জানুয়ারী ২০২১ ০০:২৫

 

শীতের মৌসুম এলেই এক সময়ে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা, রস পিঠা এবং গাড় রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহাউৎসব চলত।

গ্রামের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে আত্মীয় -স্বজন এবং জামাই-মেয়েদের দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হতো। কিন্তু গ্রামে সেই ঐতিহ্য আজ দেখা যায় না।

আগের মতো গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর গাছ আর নেই। গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও আম বাগানের কারণে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু খেজুর গাছ।

আর রস আহরণে এখনো গ্রাম্য রীতিতেই ঝুঁকি নিয়ে কোমরে রশি বেঁধে শীতের সাত সকালে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বেঁধে তা থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। আগে তারা এই কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আবার কেউ কেউ সকালে রস জ্বাল দিয়ে গুড়-মিঠাই তৈরি করতো। প্রতিবছর এই মৌসুমে খেজুর গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে দুটাকা বাড়তি আয় করতো তারা। তবে কিছু খেঁজুরের গুড় চাষি এখনো ধরে রেখেছে এই ঐতিহ্যকে।

গাছি আব্দুর রহমান বলেন, রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়ার কারণে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে এবং ক্ষেতের জমিগুলোতে আম গাছ লাগানোর কারণে খেঁজুরের গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নতুন করে আর কেউ গাছ লাগাচ্ছে না।

রাজশাহী জেলায়, দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় খেজুরের গাছ অনেক কমে গিয়েছে। আব্দুর রহমান এক সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করতেন খেজুরের রস। কিন্তু সেই কাজ আর করতে পারে না, বয়সের ভারে।

খেঁজুরের রস ক্রেতা জামান হৃদয় বলেন, ‘আসলেই খেজুর রসের স্বাদ ভোলার মত নয়। তৃপ্তিভরে খেজুরের রস খেলাম, বেশ ভাল লাগছে। কিন্তু সচরাচর খেজুরের রস পাওয়া যায় না, সরকারিভাবে এসব গাছ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া দরকার’।

দূর্গাপুর উপজেলায় আগে অনেকেই শীত মৌসুমে খেজুরের রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন এ পেশায় মানুষ কাজ করে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না।

বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে আম বাগান করছে, ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্য খেজুর গাছ ও রস।

এনএস




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top