ভারতে বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান নিয়ে নিন্দার ঝড়

রাজটাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:০০; আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪৯

ছবি: সংগৃহিত

ভারতে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে আয়কর বিভাগের তল্লাশি অভিযান নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ঘটনাকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়েছে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি দেশটির সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন পর্যন্ত এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছ।

আজ মঙ্গলবার বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে একযোগে তল্লাশি অভিযান চালায় ভারতের আয়কর বিভাগ। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দুই কার্যালয়ে একযোগে অভিযান শুরু হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরই দেশটিতে বিবিসির দুই কার্যালয়ে অভিযান চালানোর ঘটনাটি ঘটলো। বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে ২০২২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মোদির ভূমিকা তুলে ধরা হয়, যা দেশটিতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

তবে কর কর্মকর্তারা বলছেন, তল্লাশি নয়, ‘আয়কর জরিপের’ অংশ হিসেবে তারা বিবিসির কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এদিকে এক বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা আয়কর দপ্তরকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের কারণেই আয়কর বিভাগ বিবিসির দুই কার্যালয়ে অভিযান চালায় বলে মনে করছেন দেশটির গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা। তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি দাবি করেছে, বিবিসি বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা।

বিবিসি কার্যালয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের অভিযানকে অগণতান্ত্রিক ও মোদি সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব বলে উল্লেখ করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে. সি. ভেনুগোপাল বলেন, বিবিসির দপ্তরে আয়কর বিভাগের অভিযানের ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মোদি সরকার সমালোচনাকে ভয় পাচ্ছে। আমরা ভীতিপ্রদর্শনের এই পদ্ধতির কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। এটা অগণতান্ত্রিক এবং এই স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে দেওয়া যায় না।

আরেক কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, সংসদে যখন আমরা আদানি গোষ্ঠীর ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি জানাচ্ছি, তখন সরকার বিবিসির পেছনে লেগেছে। একেই বলে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, তাদের (বিজেপি) সময় শেষ হয়ে আসছে। বিবিসি কার্যালয়ে অভিযানই তার প্রমাণ।

বিবিসি কার্যালয়ে অভিযানের সময় বাইরে সতর্ক অবস্থানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি- এএফপি
এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি বলছে, কেন্দ্রীয় সরকার লাজলজ্জা সব হারিয়েছে। তারা নিজেদের বিশ্বব্যাপী হাসির পাত্র করে তুলল।

দলটির মুখপাত্র সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, বিবিসি ভুল করলে আদালতে যান। কিন্তু যখন আইন বহির্ভূত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন বোঝা যাচ্ছে বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে সঠিক প্রতিবেদন করেছে। এটা কেন্দ্রীয় সরকারও জানে।

গণমাধ্যম বিশ্লেষক সম্বিত পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের পরই কেন আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসির পেছনে লেগেছেন, তা স্পষ্ট। ক্ষমতাসীন দল বা তার সহযোগীদের ভাবাবেগে কথিত আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি কিছু ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকেও একইভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। তার দাবি, এ ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারত ১৫০ নম্বরে নেমে এসেছে। প্রতি বছর আরও নামছে।

এদিকে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বলেন, ভারতে কোনো সংস্থাকে কাজ করতে হলে ভারতীয় আইন মেনে চলতে হবে। তারা আইন মেনে চললে তাদের ভয় কিসের? আয়কর বিভাগকে তাদের কাজ করতে দেওয়া উচিত। বিবিসিকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিবিসির প্রচারের সঙ্গে কংগ্রেসের এজেন্ডা একদম মিলে যায়।

ভারতে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে বিবিসি কার্যালয়ে অভিযানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলছে, সম্প্রতি একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেসব সংবাদমাধ্যম সরকারি নীতি বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করছে, তাদেরই সরকারি এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। এই প্রবণতা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

বিবিসির এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, কর কর্মকর্তারা অভিযানকালে তাদের ফোন ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছেন। সূত্র: বিবিসি



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top