রোহিঙ্গাদের জান্তা বাহিনীতে যোগ দিতে নাগরিকত্বের প্রলোভন

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫১; আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ১৬:১৪

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ছবি: ইরাওয়াদ্দি

নাগরিকত্ব, চাল ও মোটা অংকের বেতন দেয়ার লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এ প্রলোভনে রাজি না হলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের রাজধানী সিত্তেতে রাখা হচ্ছে। সেখানে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়েছে সামরিক জান্তা। তাদের দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। খবর ইরাওয়াদ্দি।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নে সান বলেছেন, ‘প্রশিক্ষণের সময় মাত্র দুই সপ্তাহ। যাদের দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাদের জান্তা বাহিনী শুধু মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। এর মধ্যে সিত্তের ও বুচিডংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

রাখাইনের অধিকারকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী বলছে যেসব রোহিঙ্গা পুরুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তাদের এক বস্তা চাল, নাগরিকত্বের একটি পরিচয়পত্র এবং মাসিক ১ লাখ ১৫ হাজার কিয়াত বেতন দেয়া হবে।

ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, জান্তা বাহিনী ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সবার তালিকা তৈরির জন্য বুচিডং, মংডু এবং সিত্তের গ্রাম প্রশাসক ও নেতাদের চাপ দিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিটি ছোট গ্রাম থেকে অন্তত ৫০ জন, বড় গ্রাম ও শরণার্থী ক্যাম্প থেকে অন্তত ১০০ জনের তালিকা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তিন বছর পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এখন বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। তাদের হামলায় অনেক ঘাঁটি ও ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে জান্তা সেনারা। এখন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি সামলাতে দেশটির নাগরিকদের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ১৮-৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ এবং ১৮-২৭ বছর বয়সী সব নারীকে অবশ্যই দুই বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে।

আর যেসব চিকিৎসক ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে তিন বছর থাকতে হবে। চলমান রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নিয়োগ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলেও জানিয়েছে জান্তা সরকার। সেই সঙ্গে নিয়োগ এড়ানোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানা।

বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমার বাহিনী নতুন সেনা নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে তারা যুদ্ধের সঙ্গে নিয়োজিত নয় এমন নাগরিকদেরও সম্মুখযুদ্ধে বাধ্য করছে।

ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে মাত্র দেড় লাখ কর্মী রয়েছে, যার মধ্যে যোদ্ধা রয়েছে ৭০ হাজার। গত তিন বছরে নানান সংঘাত-সংঘর্ষে প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য হারিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যে কারণে একটি যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে নিজেদের সক্ষমতা হারিয়েছে তারা। সেই ঘাটতি পূরণেই বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

যদিও আইন অনুযায়ী, বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি শুধু মিয়ানমারের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার সরকার। যে কারণে তাদের এ আইনের আওতায় পড়ার কথা নয়।

তার পরও এখন তাদের বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে। সিত্তের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা যুবক কো তুন ইরাবতীকে বলেন, ‘জান্তা সেনাবাহিনীর ফ্রন্টলাইনে থেকে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে আরাকান আর্মিতে যোগ দেয়া ভালো ছিল। আরাকান আর্মিতে যোগ না দেয়ায় এখন আমার নিজের ওপরই ভীষণ রাগ হচ্ছে।’

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, যাদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; তাদের জন্য তারা সবাই চিন্তিত। রোহিঙ্গা যুবক ও তরুণরা এ নিয়ে আতঙ্কিত সময় পার করছেন। অনেকেই বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় তাদেরও প্রশিক্ষণের জন্য জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top