‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন

রাজটাইমস ডেস্ক:  | প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৪৩; আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪৯

ছবি সংগৃহিত

মানবিকতা দিয়ে বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয় জয় করা বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ৮৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত এই মিউনিসিপ্যাল বিচারক।

স্থানীয় সময় বুধবার (২০ আগস্ট) তার অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাপ্রিওর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

টেলিভিশন অনুষ্ঠান কট ইন প্রভিডেন্স সঞ্চালনার মাধ্যমে আদালতে তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা ফুটিয়ে তুলেছিলেন এই বিচারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তার বিচারকাজের ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে কোটি মানুষের শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন তিনি এবং ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

ক্যাপ্রিওর আদালতকে বলা হতো এমন একটি স্থান, যেখানে মানুষের বিচার হয় দয়া ও সহানুভূতির সাথে। জরিমানার টিকিট বাতিল করা থেকে শুরু করে রায় দেয়ার সময়ও তিনি মানবিক আচরণের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তার প্রতি মানুষের আস্থা এতটাই মজবুত হয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষ তার কাছে অর্থাভাবী মানুষকে সহযোগিতার জন্য টাকা পাঠাত।

গত সপ্তাহেই তিনি ফেসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবারো তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বার্তায় সবাইকে তার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।

কট ইন প্রভিডেন্স অনুষ্ঠানটি তার আদালতেই ধারণ করা হতো, যেখানে তার হাস্যরস আর সহমর্মিতা দর্শকদের মুগ্ধ করত। অনুষ্ঠানটির ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১০০ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে।

টেলিভিশনের অনেক বিচারকের তুলনায় ক্যাপ্রিও সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র গড়ে তুলেছিলেন। সংঘর্ষমুখী ও কঠোর হওয়ার বদলে তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল ও উদার। আদালতের অনেক ছোটখাটো মামলায়, যেমন সিগন্যাল না দেয়া বা উচ্চ শব্দে পার্টির অভিযোগে তিনি অভিযুক্তদের অবস্থার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতেন।

শিশুদের ডেকে এনে তাদের বাবা-মায়ের মামলার বিচার করার ভিডিওগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। একবার তিনি এক মায়ের ছেলে মারা যাওয়ার কথা শুনে তার সব জরিমানা মওকুফ করে দেন। আরেকটি ঘটনায় ঘণ্টায় তিন ডলারের সামান্য আয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এক বারটেন্ডারের জরিমানা মওকুফ করে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘কেউ যেন রেস্তোরাঁয় খেয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে না যান। কারণ এতে খেটে খাওয়া মানুষকেই তার মূল্য দিতে হয়।’

বিচারের সময় বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে আনতে তিনি। এক ভিডিওতে ক্যাপ্রিও বলেন, ‘উইথ লিবার্টি অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল, যার মানে- সবার জন্য ন্যায়বিচার। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯০ শতাংশ নিম্নআয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা, অন্যায্য উচ্ছেদ, এমনকি ট্রাফিক মামলার মতো নাগরিক ইস্যুগুলোতে লড়াই করতে বাধ্য হয়।’

ক্যাপ্রিওর পরিবার তাকে বর্ণনা করেছে ‘একজন নিবেদিত স্বামী, বাবা, দাদা-নানা ও বন্ধু’ হিসেবে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সহমর্মিতা, বিনয় আর মানুষের প্রতি অটল বিশ্বাসের জন্য তিনি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব রেখেছেন। তার উষ্ণতা, রসবোধ আর দয়া তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।’

ক্যাপ্রিও প্রায় চার দশক ধরে প্রভিডেন্স মিউনিসিপ্যাল কোর্টে দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালে অবসর নেন। তার জীবনী থেকে জানা যায়, প্রভিডেন্সের ফেডারেল হিল এলাকার একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ক্যাপ্রিওর। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে সৌজন্য, ন্যায়পরায়ণতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে, আমি চাই সবাই তা দেখুক। আমরা বিভাজনমুখী সমাজে বাস করি। আমি চাই মানুষ উপলব্ধি করুক যে, নিপীড়ন ছাড়াও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’

সূত্র : ইউএনবি



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top