এটিএম বুথ লুটে মেশিন মেইনটেন্যান্স চক্র

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৩:৪৫; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৪

অভিনব কায়দায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে ২ কোটি ৪২লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এই টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম ।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িতরা সবাই বুথ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটি এজেন্সিরই কর্মী। চক্রের ১১ জন সদস্য দুইজন করে একাধিক টিমে ভাগ হয়ে এটিএম বুথে টাকা লোড ও মেশিন মেইনটেন্যান্সের ডিউটি করত। ডিউটির সময় তারা এটিএম মেশিনে টাকা লোড করার পর ফল্স ট্রানজেক্শন করত। এটিএম বুথে ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করা হতো । গ্রাহকের টাকা আটকালেই তুলে নিত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এই চক্রের সদস্যরা।

জানা গেছে, বুথের লোডিং ট্রেতে টাকা দেওয়ার সময় ইচ্ছা করেই জ্যাম করে রাখত চক্রটি। পরে গ্রাহকের টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হতো। পরে পার্সবিন থেকে সংগ্রহ করে নিজেরা ভাগ করে নিত চক্রটি। এভাবে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার ২৩১টি বুথ থেকে গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানির ক্যাশ এ্যাটেনডেন্ট ও মেশিন মেইনটেন্যান্সে দায়িত্বে থাকা এজাহার নামীয় দুইজন আসামিসহ প্রতিষ্ঠানের নয়জন কর্মচারী অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেয়।

পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চক্রের দুই সদস্য তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ও আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, আসামি তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ও আব্দুর রহমান বিশ্বাস গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানীতে ক্যাশ অ্যাটেনডেন্ট ও মেশিন মেইনটেন্যান্স হিসেবে চাকরি করত। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার এটিএম বুথে টাকা লোডের জন্য গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে বুথের তালিকা ও টাকা লোডের পরিমাণসহ রিকুইজিশন আসত।

পরে বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারলে, তারা গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে। গার্ডা শিল্ড কোম্পানি ঘটনার বিষয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে আসামি তাহমিদ ও আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পায়।

এ ঘটনায় গত ৬ মার্চ গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানীর হয়ে সৈয়দ আব্দুল আলম গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। পরে মামলাটি কাফরুল থানা পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে এক মাস তদন্ত করে। এসময় তারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

এসপি জাহাঙ্গীর আলম জানান, আসামিরাসহ তাদের একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কামরুল হাসান, তারেক আজিজ, মিষ্টার আলী, রবিউল হাসান, আব্দুল কাদের, হাবিবুর রহমান, সুজন মিয়া, তরিকুল ইসলাম এবং শিশির কুমার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা এই উদ্দেশ্যে মিরপুর ও মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথসমূহে টাকা লোড দিয়ে নিজে ও আত্মীয়দের নামে ইস্যুকৃত এটিএম কার্ড দিয়ে ফল্স ট্রানজেক্শনের মাধ্যমে উত্তোলন করে হাতিয়ে নেয়। এছাড়া বুথের পার্চবিনে (রিজেক্ট বক্স) পাওয়া টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। গত ২৩ এপ্রিল আদালতে তারা বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেই বিষয়টি দেখতে মামলাটি এখনও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top