কুমন পদ্ধতি বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৫৭; আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ১৭:০৬
-2022-10-30-09-56-49.jpg)
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ন। এই ত্রুটিপূর্ন শিক্ষা ব্যবস্থায় বেড়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা বা নতুন কিছু শেখা। যেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিবেশ। খবর টিবিএসের।
কিন্তু আমাদের দেশের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবক সবার মূল লক্ষ্য থাকে ভালো ফলাফল করা। রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির পদ্ধতিগত কারণে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত পৌঁছতে ফলাফলের যথেষ্ট গুরুত্বও রয়েছে। তাই দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী রোজ স্কুলে যায় পরীক্ষায় ভালো ফল করবে বলে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই কাঁধে ১২ বিষয়ের বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার অর্থ বুঝে ওঠার আগেই ভালো ফলাফলের জন্য শুরু হয় শিক্ষক-অভিবাবকের দ্বৈত মানসিক চাপ।
দেশে প্রচলিত এ শিক্ষাব্যবস্থার ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে জাপানে উদ্ভাবিত কুমন পদ্ধতি। ১৯৫৮ সালে নিজ সন্তানের উপর প্রয়োগের মাধ্যমে এ পদ্ধতি চালু করেন জাপানের এক শিক্ষক। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতা ও মানসিক চাপমুক্ত শিক্ষার চর্চা। বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে কুমন শিক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে সম্প্রতি এ পদ্ধতির চর্চা বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক কুমন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের গবেষণা ও পরিকল্প সদস্য কানো কৈছি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঢাকায় শুরু করেছি। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সব শহরে কুমনের সেন্টার খুলতে চাই। এ পদ্ধতি কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চালু করা হয়নি। কুমন ইনস্টিটিউট চায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকায়িত গণিত ও ভাষা শিক্ষার ভীতি দূর করে তাদের ভবিষ্যত শিক্ষার পথকে সুন্দর করতে। যা তাদের একাডেমিক ও ক্যারিয়ার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। জাপানের কুমনের চিন্তার সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবেশ অনেক অনুকূলে। আমরা দেখেছি এখানকার শিক্ষার্থীরা অন্য অনেক দেশের তুলনায় মেধাবী। সরকারের সহায়তা পেলে আমরা কুমন শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই।
গণিত ও ইংরেজি ভীতি দূর করতে জাপানি গণিত শিক্ষক তরু কুমন ১৯৫৮ সালে সহজে গণিত ও ভাষা শিক্ষার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। যা কুমন পদ্ধতি নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। প্রথমে জাপানে চালু হলেও বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর ৬০টি দেশে ১৪ হাজার ৫০০ স্কুলে কুমন শিক্ষাপদ্ধতি চর্চা করা হয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ২০১৭ সালে জাপানের কুমন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে এ শিক্ষাপদ্ধতি চালু করে। সারা দেশে ব্র্যাক স্কুলে কুমন চর্চার কথা থাকলেও এর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব দেখা গেছে ঢাকায় ৩টি সেন্টার চালু হওয়ার পর থেকে। উত্তরা, ধানমণ্ডি ও সিদ্ধেশ্বরীতে তিনটি সেন্টার চালু করে হয়েছে। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে এ পদ্ধতি চর্চার আওতায় আনা হয়েছে। এ বছরের মধ্যে ৭টি এবং আগামী বছরের প্রথম দিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ কয়েকটি জেলা শহরে মোট ১২টি সেন্টার খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
বাংলাদেশে কুমনের শিক্ষার্থীদের সিলভার, ব্রোঞ্জ ও গোল্ড এই তিন মানদণ্ডে তাদের স্তর নির্ধারণ করা হয়। ব্র্যাকের কুমন প্রতিনিধিরা জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশে আগামী বছর থেকে আইসিটি বিভাগের ৩০০ স্কুল অব ফিউচারে জাপানি শিক্ষা পদ্ধতি কুমন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই পদ্ধতিকে প্রায়োগিক ও কার্যকরী বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
সিদ্ধেশ্বরী সেন্টার ইন চার্জ আশরাফুন্নেসা এংকল বলেন, আমি মূলত একজন অভিভাবক হিসেবে কুমন সম্পর্কে জানতে পারি। আমার সন্তান কুমনে যেতে শুরু করলে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়। এরপর ব্র্যাকের সহযোগিতায় আমি একটি সেন্টার খুলেছি। এখানে প্রথমেই শেখানো হয় যে, ক্লাসে প্রথম হওয়া বা এ প্লাস পাওয়া জরুরি নয়। কুমনের মূল উদ্দেশ্য হল শিশুরা প্রথম থেকেই এমন কিছু শিখবে যা তার জীবনে প্রয়োগ করবে। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই শিশুকে বিশ্লেষণী ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়।
ব্র্যাক কুমনের প্রধান নেহাল বিন হাসান বলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফটার স্কুল প্রোগ্রাম। বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ৫৯তম দেশ হিসেবে চালু হয়েছে। ৪৩ লাখ শিক্ষার্থী কুমন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। জাপানের শিক্ষক তরু কুমন শিক্ষায় দুর্বল নিজ সন্তানকে আত্মবিশ্লেষণ থেকে এ পদ্ধতিতে পড়াতেন। যা পরবর্তীতে বিশ্বে কুমন পদ্ধতি নামে পরিচিতি লাভ করে। আমরা মূলত ব্র্যাকের সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চাদের ১০০ স্কুলে এটি চালু করি। তখন তাদের মধ্যে ভাল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই আমরা চিন্তা করি এটি পুরো দেশে ছাড়িয়ে দিলে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক একটি পরিবর্তন আসতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: