আধুনিকায়ন প্রয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:০৫; আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৫২

ছবি: সংগৃহিত

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। দেশের আমদানি ও রফতানির অন্যতম মিলনস্থল এই বন্দরটি। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া পুরোপুরি লাগেনি এই বন্দরে। খবর টিবিএসের।

চট্টগ্রাম বন্দরের আঞ্চলিক শিপিং হাব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে এ বন্দর তাল মিলাতে পারছে না। রোববার এক গোলটেবিল বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের আঞ্চলিক শিপিং হাব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে এ বন্দর তাল মিলাতে পারছে না। রোববার এক গোলটেবিল বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা এ কথা বলেন।

রাজধানীর ইস্কাটনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কার্যালয়ে আয়োজিত 'হাউ চট্টগ্রাম পোর্ট ক্যান বি টার্নড ইনটু আ রিজিওনাল হাব' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উদ্যোক্তারা বন্দরটির বিপুল সম্ভাবনা তুলে ধরেন এবং এসব সম্ভাবনার পথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগকে বড় বাধা বলে দায়ী করেন।

ব্যবসয়ী নেতাদের অনেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের-মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও নতুনভাবে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বন্দরের পাশেই বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কনটেইনার পরিচালনার কাজ বিদেশিদের হাতে দিলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টিবিএসের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতারা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং বে টার্মিনালের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে প্রধান বাধা এখন এনবিআর।

তিনি বলেন, পণ্যের এইচএস কোড সামান্য ব্যতিক্রম হলেই কাস্টমস পণ্য আটকে দেয়। বন্দরে পণ্য পড়ে থাকার মূল কারণ কাস্টমস।

হাতেম বলেন, কাস্টমসের এ কাজে সরকারের কোনো লাভ হয় না, কিন্তু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

চট্টগ্রাম চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহও বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ে ৯৪ শতাংশ বিলম্বের জন্য কাস্টমসকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, 'কাস্টমসের অফিসাররা আসেন দিনের ১০টায়। তারা না এলে কাজ হয় না।'

এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তিনি বলেন, ভুল পলিসির মাধ্যমে পণ্য আটকে দেওয়া হয়। ফলে ২ দিনের স্থলে কনসাইনমেন্ট ক্লিয়ার করতে ২ মাস লেগে যায়।

'বোর্ডের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, 'পণ্য বন্দরে আসার সাথে সাথে ওয়্যারহাউজে নিয়ে গেলে সমস্যা ছিল না। কাস্টমস গিয়ে ওয়্যারহাউজে পণ্য পরীক্ষা করত। কিন্তু এখানে সে ব্যবস্থা নেই।'

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান এত পেছনে হওয়ার (১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮তম) অন্যতম কারণ কাস্টমস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর ইতিমধ্যে রিজিওনাল হাব হয়ে আছে। আমরা পূর্ব-পশ্চিমের মাঝখানে আছি। কক্সবাজার বিমানবন্দর রিজিওনাল হাব-এ পরিণত হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এমনিই রিজিওনাল হাব হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।'

তবে তিনি বলেন, বন্দর যেসব সমস্যায় ভুগছে তার জন্য একটি পক্ষকে দোষ দিলে হবে না। কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বন্দরে স্ক্যানারও বাড়ানো হয়েছে।

অবশ্য তিনি বলেন, বন্দরে একটি বিরাট শক্তি স্ক্যানার বসাতে দেয় না। চালু করা হলেও তারা নষ্ট করে দেয়। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'এলসি খোলা হয় মাইক্রোফোন আমদানির, কিন্তু আসছে পাথর-বালি। এগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।'

তিনি স্বীকার করেন, 'আমাদের লজিস্টিকস দুর্বলতা শুরু থেকেই। ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেনি। এটি আমরা ধীরে ধীরে করছি।'

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দরসংশ্লিষ্ট কিছু কাজ অনলাইনে হলেও অনেক কাজের জন্যই পোর্ট, কাস্টমস অফিস এবং অন্যান্য অফিসে সশরীরে যেতে হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান 'পণ্যের ল্যাব টেস্ট, এইচএস কোড সংক্রান্ত কারণে কনসাইনমেন্ট ক্লিয়ারে সময় বেশি লেগে যায়। এটি কাস্টমস ও এনবিআরের দায়িত্ব।'

তিনি বলেন, বন্দরের যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তাতে ৪৮ ঘণ্টায় একটি জাহাজ ছেড়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এজন্য কাস্টমস, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারসসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সহায়তা লাগবে।

অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে কাস্টমস অটোমেশন করেছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ আমদানি করেছে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের এবং পণ্য রপ্তানি করেছে ৫২ বিলিয়ন ডলারের।

ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা বলেন, এটি ক্রমাগত বাড়বে। আগামী আট বছরের মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যই রয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

এ কারণে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত চট্টগ্রাম বন্দরের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন আরও বাড়বে। শুধু তা-ই নয়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে ২০২৬ সালের মধ্যে বর্তমানের দ্বিগুণেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা); চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিসিআইয়ের পরিচালক অঞ্জন শেখর দাস; বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম; বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ; সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পরিচালক ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সম্পাদক ইনাম আহমেদের সঙ্গে বক্তব্য রাখেন।

#এসকে

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top