দিবাযত্ন কেন্দ্র বিধিমালা খসড়া চূড়ান্ত, সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২৬; আপডেট: ৪ মে ২০২৪ ০৮:০৫

ফাইল ছবি

দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে কেন্দ্রের শিশু হারালে ১০ বছর জেলের বিধান রেখে 'শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বিধিমালা-২০২২' প্রণয়ন করছে সরকার। খবর যুগান্তরের।

খসড়া বিধিমালার ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে হারিয়ে যায়, তাহলে দায়ী ব্যক্তির শাস্তি হলো সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড।

ধারাটিতে এই অপরাধের সর্বনিম্ম শাস্তি কিংবা অর্থদণ্ডের পরিমাণ উল্লেখ নেই। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন পাবে না।

বিধিমালায় উল্লিখিত অন্যান্য অপরাধের দায়ে কেউ অভিযুক্ত হলে, সে জামিন পাবে। বিধিমালায় প্রশাসনিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ এর কোনো বিধান লংঘন হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

তিন ধরনের কেন্দ্র পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়। শিশু সেবার জন্য কোন শ্রেণির যত্নকেন্দ্রে কত টাকা মাসিক ফি দিতে হবে এবং কীভাবে আদায় হবে তা বিধিমালায় বলা হয়েছে। বিধিমালায় শিশুর খাবার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বিধিান রাখা হয়েছে।

সরকারের ৯ গ্রেডের ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবেন। আইনের বিধান অনুযায়ী নিবন্ধন নিয়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করতে হবে। যিনি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করবেন তিনি কমপক্ষে এইচএসসি পাশ এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে হবে।

ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবে না। এছাড়া দেউলিয়া হলেও তা পারবে না। বিধিমালা প্রণয়নের অগ্রগতি জানাতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এনডিসি বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা একটি জুতসই বিধিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করছি। খসড়া বিধিমালার ওপর ইতোমধ্যে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। যেসব পরামর্শ এসেছে সেগুলো পর্যালোচনা করছি। আরও একটি বৈঠক লাগবে তারপর অর্থ আইন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবে। তারপর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।

বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানান, এটি কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুখবর। তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে দেশের সব জেলা-উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ভবনে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চার মাস থেকে নিয়ে ছয় বছরের শিশুদের ওই কেন্দ্রে রাখা যাবে। উচ্চশিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশে কর্মজীবী ও পেশাজীবী মায়েদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মায়েদের শিশু সন্তানের দিবাকালীন নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার চাহিদাও বাড়ছে সমানে। পক্ষান্তরে যৌথ পরিবার প্রথা বিলুপ্তপ্রায় এবং একক পরিবার বাড়ছে হু-হু করে। একক পরিবারগুলোতে শিশু সন্তান লালন-পালন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিশুদের পরিচর্যায় সেবাকারীর অভাবও দেখা দিয়েছে। দেশে ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা শুরু হয়েছে। কিন্তু শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনায় ছিল না কোনো সমন্বিত আইন ও বিধিমালা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার কেন্দ্র স্থাপন, সুশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা এবং প্রদেয় সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করতে গত বছর ২৪ জুন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছে সরকার, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

খসড়া বিধিমালার নবম ধারায় বলা হয়েছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা প্রতারণা করলে আইন, বিধি বা শিশু সনদের কোনো শর্ত না মানলে, নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন নবায়ন না করলে ওই কেন্দ্রের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। এছাড়া নিবন্ধন গ্রহণের পর ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে বা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ এর কোনো ধারা লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হলেও নিবন্ধন বাতিল হবে। বিধিমালার ১০ ধারায় সরকারি, আধাসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পরিচালিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ফি আদায়ের বিষয়ে বলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মাসিক তিন হাজার টাকা দিয়ে সেবা গ্রহণ করতে হবে। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ফি পরিশোধ করতে হবে। মাসের আংশিক সময় কেন্দ্রে থাকলেও পুরো মাসের ফি জমা দিতে হবে। কেউ নির্ধারিত সময়ে ফি পরিশোধে অপারগ হলে, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সেবা প্রদানে অসম্মতি জানাতে পারবে। পুনঃভর্তি ফি ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় ফি নগদ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করতে পারবে।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ফি দিয়ে সেবা গ্রহণ করতে হবে। অন্যান্য নিয়ম সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের অনুরূপ হবে। একইভাবে নিুবিত্তের জন্য পরিচালিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তবে নিুবিত্তের জন্য পরিচালিত শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের মাসিক ফি হবে দুই হাজার টাকা। মাসিক ফি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য হ্রাস-বৃদ্ধির বিধান রাখা হয়েছে। সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শিশুকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখা যাবে। শিশু ভর্তিসংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বনের বিধান রাখা হয়েছে।

শিশুর বয়স অনুযায়ী তিনবার শিশুকে খাবার প্রদান করতে হবে। ফল, বিস্কিট এবং কেক জাতীয় খাবার ছাড়া শিশু স্বাস্থ্যের উপযোগী খাদ্য রান্না করে পরিবেশন করতে হবে। শিশুর স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো শিশু অসুস্থ হলে অভিভাবককে অবহিত করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। তবে শিশু পড়ে ব্যথা পেলে বা আঘাত পেলে, নাক দিয়ে রক্ত ঝরলে, পেট ব্যথা হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা যাবে। শিশুর শারীরিক বিকাশ ও পুষ্টি নিয়মিত পরিবীক্ষণ করতে হবে। শিশুর উপযোগী শিক্ষা, নিয়মিত শরীরচর্চা, জাতীয় সংগীত, শিক্ষণীয় কার্টুন, গান এবং ছোটদের ফিল্ম পরিবেশন করতে হবে। মানসিক বিকাশের জন্য বয়সভিত্তিক ছড়া, গল্পের বই, ড্রয়িং, বই, খাতা, পেনসিল ও বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।

খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ৫০ থেকে ৬০ জন শিশুর জন্য একজন মহিলা ডে কেয়ার অফিসার, একজন শিক্ষিকা, একজন স্বাস্থ্য শিক্ষিকা, চারজন আয়া, দুজন বাবুর্চি, দুজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে একজন মহিলা অফিসার, একজন শিক্ষিকা, একজন স্বাস্থ্য শিক্ষিকা, দুজন কেয়ার গিভার, একজন বাবুর্চি, দুজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকতে হবে। প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে, দীর্ঘসময় ভিডিও চিত্র ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ প্রযুক্তির নাইট ভিশন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা অনুরূপ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র স্থাপন করতে হবে।

এছাড়া বিধিমালায় নিবন্ধন ছাড়া কোনো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করলে দুই বছরের কারা বা সর্বোচ্চ দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

তবে এই অপরাধের দায়ে পাঁচ লাখ টাকার নিচে অর্থদণ্ড বা দুই বছরের নিচে কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে উভয় দণ্ড দ্বিগুণ মানে চার বছরের কারা এবং ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। যদি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে কেউ সংক্রামক রোগ ছড়ায়, ছড়াতে সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এবং রোগের ঝুঁকির বিষয়টি শিশুর অভিভাবককে অবহিত না করে তথ্য গোপন করে, তাহলে তার ছয় মাসের কারা ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে অপরাধীর দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কোনো ব্যক্তির কর্তব্য কর্মে অবহেলায় শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে বা স্বাস্থ্যহানি ঘটলে অভিযুক্তের দই বছরের কারা বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের কারা ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সব অপরাধই ফৌজদারি অপরাধ। সে ক্ষেত্রে কারা ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া যে কোনো অপরাধ দমনের জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে।

যুগান্তরের প্রতিবেদনের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top