বেকার বসে থাকবে নির্মানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫৯; আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৪৭

ছবি: সংগৃহিত

নিরবচ্ছিন্ন শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যু উৎপাদনের জন্য নতুনভাবে প্রায় প্রস্তুতকৃত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে আপাতত গ্যাস সরবরাহে যাচ্ছে না সরকার। খবর বণিক বার্তার।

গ্যাস সরবরাহে নির্মাণাধীন পাইপলাইনের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি। অন্যদিকে তার আগেই কেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় নির্মাণ শেষেও গ্যাসের অভাবে এসব কেন্দ্রকে বসে থাকতে হবে। সব মিলিয়ে বিদ্যমান বাস্তবতায় এসব প্রকল্পের উৎপাদন কার্যক্রম পিছিয়ে দিতে চাইছে সরকার।

বিদ্যুৎ ভবনে গতকাল নির্মাণাধীন আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত একটি নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় রিলায়েন্স পাওয়ার, সামিট পাওয়ার, ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারসহ নির্মাণাধীন আইপিপিগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সভায় নির্মাণাধীন আইপিপিগুলোর বিদ্যমান অবস্থান পর্যালোচনাসহ বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক অবস্থা, বিদ্যমান জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। আইপিপির প্রতিনিধিরা গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিমার্ণাধীন কেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান। স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদার তুলনায় গ্যাস উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি উচ্চমূল্যের কারণে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানিও বন্ধ রয়েছে। এতে দেশে গ্যাস সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহের জন্য বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজও খুব বেশি দূর এগোয়নি। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে। অন্যদিকে এ সময়ের আগেই মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স, সামিট ও ইউনিক পাওয়ারের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এ তিন কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাস সংকটের সমাধান না হলে নির্মাণাধীন আইপিপিগুলোর উৎপাদন পিছিয়ে দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে সভায়।

বণিক বার্তার পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে সভায় উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সভায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি সম্পন্ন না হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে যে গ্যাস সংকট চলছে তা অব্যাহত থাকলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না এবং এতে কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ হয়ে গেলেও বসে থাকতে হবে। অবশ্য বসে থাকলেও এসব কেন্দ্রের জন্য চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বড় অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদক সামিট পাওয়ার নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে সামিট মেঘনাঘাট-২ নামে ৫৮৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ কেন্দ্রে সামিটের পাশাপাশি জাপানের জেরাও বিনিয়োগ করেছে। কেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস, এলএনজি কিংবা ডিজেল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনা, জমি ইজারা, গ্যাস সরবরাহ, জ্বালানি সরবরাহের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ২২ বছরের চুক্তি রয়েছে। এ বছরের মার্চের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে সামনের বছরের ৩০ জুন বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে কেন্দ্রটির। কিন্তু গ্যাস না পেলে সে সময়েও এটি চালু করা সম্ভব হবে না।


নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি গ্যাস ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ইউনিক পাওয়ার। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক ও কাতারের নেবরাস পাওয়ারও এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এ বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও নতুন করে সামনে বছরের জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা তাদের।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিপিডিবির সঙ্গে নির্মাণ ও ক্রয় চুক্তি করে ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স। রিলায়েন্স মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট আইপিপি-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এ বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। যদিও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। জাপানের জেরার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রিলায়েন্স পাওয়ার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করেছেন। পাশাপাশি বিদেশী ঋণও রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসতে না পারলে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন নিশ্চিতের পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হবে। তাছাড়া এসব কেন্দ্রে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করায় এর যান্ত্রিক দক্ষতা অনেক বেশি। ফলে অন্য কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তার চেয়ে এ কেন্দ্রগুলোয় তুলনামূলক কম গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমেই সে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম বণিক বার্তাকে বলেন, যেসব কেন্দ্রের দক্ষতা বেশি সেসব কেন্দ্রেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি।

মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় এবং হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় স্থাপিত ও স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক গ্রাহক ও অন্যান্য গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহের জন্য কুমিল্লা জেলার বাখরাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন ও আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পাইপলাইন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। এ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন জিটিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তার আগে কিংবা এ বছরে কোনোভাবেই এ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আর পাইপলাইন নির্মাণ শেষ না হলে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে বিদ্যমান যে পাইপলাইন রয়েছে সেখান থেকে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে।

বণিক বার্তার প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top