ধীরে ধীরে বাড়ছে মসলা ও শুকনা ফলমূলের দাম

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২২ ২১:০৯; আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৩২

ফাইল ছবি

দেশের মসলা ও শুকনা ফলমূলের (ড্রাই ফ্রুটস) অধিকাংশ যোগান আসে বিদেশ থেকে। এদিকে, এলসি খুলতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় এসব পণ্যের আমদানি কমে গেছে। ফলে বাড়তে শুরু করেছে এই পণ্যগুলির দাম। খবর বণিক বার্তার।

দেশে অতি নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজারে দর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের অভাবে আমদানি ঋণপত্র খোলার হার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমেছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মসলা ও শুকনা ফলমূল (ড্রাই ফ্রুটস) আমদানিনির্ভর হওয়ায় পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে এসব পণ্যের বাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে মসলাপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। গরমমসলা অর্থাৎ জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জয়ত্রী, জায়ফল, এলাচি, মেথির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানি না হওয়ায় আগামীতে বিদেশী মসলার দাম আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশে উৎপাদিত মসলার মধ্যে অন্যতম হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, মেথি, কালিজিরা, মিষি জিরা, তেজপাতা অন্যতম। অন্যদিকে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জয়ত্রী, জায়ফল, এলাচির মতো মসলা শতভাগ আমদানি হয়। দেশীয় মসলার মতো মেথি, কালিজিরা, ধনিয়াও চাহিদার কারণে বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষত লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ চীন, ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার থেকে ব্যবসায়ীরা গরমমসলা আমদানি করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মসলা সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় ভারত ও চীন থেকে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন শুকনা মসলাপণ্যের দাম কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে শুকনা মরিচের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে শুকনা মরিচের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙেছে। এক মাস আগেও প্রতি কেজি আস্ত হলুদ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়। অন্যদিকে আমদানি করা মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচ, এলাচি, সরিষার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাইকারি বাজারে। প্রতি কেজি জিরার দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪১০-৪৫০ টাকায়, দারুচিনি সমপরিমাণ বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায়, লবঙ্গ ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২০০ টাকায়, গোলমরিচ ৮০-১০০ টাকা বেড়ে ৮২০ টাকায়, এলাচি প্রায় ৩০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জয়ত্রী, জায়ফলসহ বিভিন্ন আমদানীকৃত মসলা আগের দামের চেয়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরবরাহ সংকটের মধ্যেই শীতকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানের কারণে বাড়তি চাহিদায় পাইকারি বাজারে চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন নানা অনুষ্ঠানে দেশীয় মসলার পাশাপাশি আমদানীকৃত মসলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়। অধিকাংশ গরম মসলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল। জিরা, এলাচি, লবঙ্গ, গোলমরিচসহ ৮-১০টি মসলার শতভাগই বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করতে হয়। এ কারণে ঋণপত্রের মার্জিন বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকের ঋণপত্র খুলতে অনীহায় কয়েক মাস ধরে আমদানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শুকনা ফলমূল যেমন কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, মিষ্টি আলুবোখারা, টক আলুবোখারা, কিশমিশ, আখরোট, বিভিন্ন ধরনের তৈলবীজের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি পর্যায়ে। মসলা ও ড্রাই ফ্রুটসের এ সংকট দেশের অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামেও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক অমল সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, শীত মৌসুমে দেশের প্রায় সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। এ কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও আমদানি সংকটে সরবরাহ চেইনে তৈরি হয়েছে বাধা। আগামীতে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে কিনা এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও রয়েছে নানামুখী বিতর্ক। যার ফলে আমদানীকৃত গরমমসলা, ড্রাই ফ্রুটসের বাজার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিত্য ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি মসলাপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক জানান, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কারণে গরমমসলা ও ড্রাই ফ্রুটসের ব্যবহার জনপ্রিয়। ঘরোয়া রান্নায় না হলেও অনুষ্ঠান, বিয়ে কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারে গরমমসলা ও ড্রাই ফ্রুটস ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। শীত মৌসুমে চাহিদা বাড়লেও আমদানি সংকটের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে মসলাপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে।

বনিক বার্তার প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top