এলসি খোলার পরিমাণ কমাতে সফল ব্যাংলাদেশ ব্যাংক

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২২ ২০:০৪; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৬

ছবি: সংগৃহিত

ডলার সংকট মোকাবেলায় আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলসির খোলার উপর কড়াকড়ি আরোপের পর অনেকটাই কমে এসেছে এলসি খোলার পরিমাণ। খবর টিবিএসের।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে কঠোর হওয়ার পর অক্টোবরে এসে সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অক্টোবরে দেশে নতুন এলসি খোলা কমেছে ৩৮ শতাংশ। আর চলতি নভেম্বরের প্রথম পক্ষে (১-১৬ তারিখ পর্যন্ত) নতুন এলসির পরিমাণ ৬৩ শতাংশেরও বেশি কমেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রায় পাঁচ মাসে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ।

আমদানির নতুন এলসি খোলা কমিয়ে আনাকে নিজেদের বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য ফেরাতে আমদানি কমানোর বিকল্প ছিল না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসিতে নানা শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোও অপ্রয়োজনীয় নতুন এলসি খোলা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। সব মিলিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত যতটুকু সাফল্য এসেছে, তাতে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তুষ্ট। আমদানির এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের শুরু থেকে ডলার সংকট কমবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের অক্টোবরে আমদানির নতুন এলসি খোলা হয়েছিল ৭৬৯ কোটি ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে নতুন এলসির পরিমাণ ৪৬১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ হিসাবে অক্টোবরে নতুন এলসি কমেছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর গত বছরের নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে দেশের আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল ৪৬১ কোটি ডলার। চলতি নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে মাত্র ১৭০ কোটি ডলারের নতুন এলসি খোলা হয়েছে। এ হিসাবে চলতি মাসে আমদানির নতুন এলসি ৬৩ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এর আগে সেপ্টেম্বরে ২১ ও আগস্টে ১০ শতাংশ এলসি কম খোলা হয়েছে। গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৭৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নতুন এলসি খোলা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ডলারের। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এলসি খোলা কমেছে ৮৪০ কোটি বা ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।

তবে নতুন এলসি খোলা কমলেও চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। গত অর্থবছরের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ১৫১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ২৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। সে হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তির চাপ বাড়ায় দেশে ডলার সংকটও বাড়ছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির নতুন এলসি খোলার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলেও দেশের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমাতে পারেনি। বরং চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ আরো বেশি স্ফীত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ঘাটতির পরিমাণ ৩৬১ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতির পরিমাণ ৩৪৪ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি ছিল মাত্র ৮১ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, গত অর্থবছর ৮৯ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়েছে। আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৫ শতাংশেরও বেশি। এক বছরে এত পরিমাণ আমদানি দায় পরিশোধের জন্য আমাদের অর্থ ব্যবস্থা প্রস্তুত ছিল না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানির নতুন এলসি ৩০ শতাংশ কমে এলেও এখন পর্যন্ত আমরা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের সংকট দেখিনি। আমদানি কমার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকলে অর্থবছর শেষে দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্য ও ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসবে বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এলসি খোলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানি। এর মধ্যে বস্ত্র, চামড়া, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। আর কম্পিউটার, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। শিল্পের কাঁচামাল ও ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির এলসি খোলার পরিমাণও কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। আমদানির কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেও পরিশোধিত জ্বালানি তেলের নতুন এলসি ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খাদ্যপণ্যের এলসির পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানোর পাশাপাশি এলসি দায় নিষ্পত্তির জন্য রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার জোগান দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ৫৯৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও রিজার্ভ থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। গত অর্থবছরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। যদিও গত বছরের আগস্টে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।

টিবিএসের নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top