ধর্ষণের রায়

ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্যের ওপর জোর দিলেন হাইকোর্ট

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৫৪; আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৬

ফাইল ছবি

খুলনার দাকোপে এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় দেওয়া রায়ে উচ্চ আদালত বলেছেন, শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আপিলকারী ধর্ষণ করেননি এই অজুহাতে সে (আসামি) খালাস পেতে পারে না।

আসামি মো. ইব্রাহিম গাজীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে উচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায় প্রকাশিত হয়েছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেন। ১৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।


রায়ে আদালত বলেছেন, ঘটনাটি ঘটে ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল। আর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনাল ওই বছরের ১৭ মে আদেশ দেন। অর্থাৎ ঘটনার ৩২ দিন পরে। যদি ভিকটিমকে ওই সময় ডাক্তারি পরীক্ষা করা হতো তবুও ৩২ দিন পর পরীক্ষার কারণে কোনো ধর্ষণের আলামত না পাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না করার কারণে প্রসিকিউশন পক্ষের মামলা অপ্রমাণিত বলে গণ্য হবে না। ভিকটিমের মৌখিক সাক্ষ্য ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ভিত্তিতে তাকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে।

‘আব্দুস সোবহান বনাম রাষ্ট্র’ (৫৪ ডিএলআর, ৫৫৬ মামলা) মামলার প্রসঙ্গ টেনে রায়ে বলা হয়, ঘটনার ২১ দিন পর ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় এবং তাতে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু ধর্ষণ সম্পর্কিত ভিকটিমের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য হওয়ায় আসামিকে প্রদত্ত নিম্ন আদালতের সাজা আপিল আদালত বহাল রেখেছে। কাজেই শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আপিলকারী ধর্ষণ করেননি এই অজুহাতে সে (আসামি) খালাস পেতে পারে না।


আদালতে আপিলকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল হক হেলাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ।

গতকাল বুধবার (১৪আগস্ট) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আসামি ইব্রাহিম গাজীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি হাতে পেয়েছি। প্রত্যেকটি ধর্ষণ মামলার ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা আলাদা। আসামিপক্ষ বলেছে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্ট ছিল না। হাইকোর্ট বলেছেন শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আপিলকারী ধর্ষণ করেননি এই অজুহাতে সে (ইব্রাহিম গাজী) খালাস পেতে পারে না। যেহেতু ভিকটিমের মৌখিক সাক্ষ্য ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সে জন্য তার যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখা হয়।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, খুলনার দাকোপে এক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন ইব্রাহিম গাজী। ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল ভোরে অজু করতে যাওয়ার সময় ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন ইব্রাহিম—এমন অভিযোগে ওই শিক্ষার্থীর বাবা খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশি মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ইব্রাহিম গাজীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ইব্রাহিম ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন। এই আপিলের শুনানি শেষে তা খারিজ করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড বহাল রেখে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।

সুত্র: প্রথম আলো/ এমএস ইসলাম




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top