আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা

১০ বছরেও হয়নি বিচার

রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২১ ১৫:১২; আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ২২:১৯

সাভারের আমিনবাজারে ডাকাতের তকমা লাগিয়ে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন হয়।

সাড়ে সাত বছরের বেশি সময় এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হলেও নানা অজুহাতে আসামিপক্ষ তা বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের। এমতাবস্থায় মামলার সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার।

২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ রোববার এ মামলায় যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন হরতালের অজুহাতে আসামিপক্ষের একজন সিনিয়র আইনজীবী সময় আবেদন করেন।

আদালত তা মঞ্জুর করে ৭ এপ্রিল পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন। ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থী টিপু সুলতানের মা কাজী নাজমা সুলতানা বলেন, ‘বিচার যাই হোক, অনেকের হয়তো শবেবরাত এলে ওই নির্মম ছয় ছাত্র হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ে। কিন্তু আমি মা। প্রতিদিনই আমার জন্য শবেবরাত। সব সময়ই ছেলের কথা মনে পড়ে। মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার পেলে অন্তত শান্তি পেতাম।’

নিহত ইব্রাহিম খলিলের মা বিউটি বেগম ২০১৮ সালের শেষের দিকে মারা যান। এর কিছুদিন আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকালে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি, হয় আমাদের ছেলে হত্যার বিচার করুন, তা না হলে নিহত ছয় ছাত্রের বাবা-মাকে একসঙ্গে গুলি করে মেরে ফেলুন।’

জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাকিলা জিয়াছমিন মিতু বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। রোববার মামলার যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য থাকলে এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেননি। এজন্য আদালত ৭ এপ্রিল পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেছেন। ৬ জানুয়ারি থেকে এ যুক্তিতর্ক চলছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সহযোগিতা করলে আর দু-একটি কার্যদিবসের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার কথা। এরপরই আশা করছি, আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ছয় কলেজছাত্রকে। নিহতরা হলেন-তৌহিদুর রহমান পলাশ, ইব্রাহিম খলিল, কামরুজ্জামান, টিপু সুলতান, সিতাব জাবির মুনিব ও শামস রহিম শামীম। নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যান।

ঘটনার পর কথিত ডাকাতির অভিযোগে বেঁচে যাওয়া আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।

পুলিশ, সিআইডির হাত ঘুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে।

পরবর্তী সময়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়।’ ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ৬০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন, সাতজন পলাতক ও বাকি ৫০ জন জামিনে আছেন। এ মামলায় ১৪ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় মোট ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top