সারা দেশে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ৭ জন নিহত

ডেক্স রির্পোট | প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারী ২০২২ ১০:৪০; আপডেট: ৭ জানুয়ারী ২০২২ ০২:১৩

ফাইল ছবি

কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারা, জালভোট, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে ৫ম ধাপে সারা দেশের ৭০৭ ইউপি’র ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। এএসপি, ওসি, সাংবাদিক, চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থীসহ আহত হয়েছেন অনেকে। নৌকায় সিল মারতে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আটকের ঘটনাও ঘটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মারধর করে ডোবায় ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা। সূত্র: মানব জমিন। 

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী সহিংসতায় চাঁদপুরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন কচুয়ার ও ১ জন হাইমচরের। বিকালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় ছুরিকাঘাতে তারা মারা যান। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কচুয়ার সাচার এলাকায় নিহত যুবকের নাম শরীফ হোসেন। দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে ছুরিকাঘাতের শিকার হন শরীফ। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাহেরচর এলাকায় বেলা ৩টায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে ১ জন মারা গেছেন ।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আল আমিন (২২) নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত আল আমিন বাঘাডুবা গ্রামের আচ্ছা মিয়ার ছেলে। মেরুরচর হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শফিকুল ইসলাম সম্রাট ও ওসি তদন্ত আব্দুর রহিম ৫ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আহত হয়েছেন। এ সময় বকশীগঞ্জ থানার গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ এএসপির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ৪টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই শতাধিক রাউন্ড গুলি করা হয়। এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। জামালপুর পুলিশ সুপার (এসপি) নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের জুমারবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে নৌকার এজেন্টদের ব্যালট বইতে সিল মারা, নৌকার সিলমারা ব্যালট জব্দ, পোলিং এজেন্টসহ আটক করা হয়েছে ২০ জনকে, ককটেল বিস্ফোরণ, জাল ভোটসহ বিভিন্ন অসংগতি দেখা গেছে। গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সংঘর্ষে অংকুর দত্ত (৩৮) নামের একজন নিহত হয়েছেন। নিহত অংকুর দত্ত সিংহরা এলাকার নেপাল দত্তের ছেলে। সাড়ে ১২টায় দিকে চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আনোয়ার খালেদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিংহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় মেম্বার প্রার্থী রঘুনাথ শিকদার এবং নাজিম উদ্দীনের সমর্থকদের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আপেল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হন অংকুর দত্ত। ঘটনার সময় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর স্বজনরা চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জ দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ২ জন মেম্বার প্রার্থীর কর্মীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় ভোটকেন্দ্রের পাশে দাঁড়ানো স্থানীয় চরডালুটিয়া গ্রামের মো. মাহাতাব আলী স্ত্রী সুমেলা খাতুন (৫০) ঘটনাটি দেখে স্ট্রোক করেন। বাড়িতে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ায় ফেসবুক পেজে নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরার কারণে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ২টার দিকে গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জাইগুলি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির হোসেন জাইগুলি উত্তরপাড়া এলাকার মৃত লয়া মিয়ার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাবতলী থানার ওসি তদন্ত জামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পর বিকাল ৩টার দিকে জাকির মারা যান।

নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর ১৫টি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সংঘর্ষের ঘটনা। সকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। বেলা ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে সিলমারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ৬ জন আহত হন। একই সময়ে বাঘাব ইউনিয়নে বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর করা হয়েছে ৪টি বাস। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জোরপূর্বক ব্যালটে সিল (চেয়ারম্যান-মেম্বার) মারাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর দুপুর ১টার দিকে একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে নৌকায় সিলমারাকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ।

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদগঞ্জে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থীর কর্মীরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশের ওপর হামলা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টাসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা ১টায় ৯নং গোবিন্দপুর (উত্তর) ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ঢুকে একদল যুবক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাঁচশ’ ৩৬টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয় ও মারধর করে। খবর পেয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, প্রার্থীর কর্মীরা ব্যালট পেপারের ছয়টি বই ছিনিয়ে নিয়েছে। কিছু সময় পর পাঁচটি মুড়িসহ ৬৪টি ব্যালট পেপার ফেরত দিয়েছে। একই ইউনিয়নের ধানুয়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা কেন্দ্রের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। একই সময়ে দক্ষিণ ধানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দু’প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে মহিলা বুথে পুরুষ ভোটারের ভোট, বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, সিলমারা ব্যালট জব্দসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফেনী সদর উপজেলার দক্ষিন লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে নৌকার এজেন্টে ব্যালট বইতে সিল মারতে দেখা গেছে। বেলা ১১টার দিকে এ চিত্র দেখা গেলে সাংবাদিক দেখে দৌড় দেয় এজেন্ট। এ সময় নৌকর সিলমারা ব্যালট জব্দ করে প্রিজাইডিং অফিসার। ওই কেন্দ্রের মহিলা ৩নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফজলুল হক জানান, ‘নৌকার এজেন্ট আমার সামনে থেকে চেয়ারম্যান ব্যালট কেড়ে নিয়ে সব সিল মেরে দিচ্ছে। আমার কথা তারা শুনছে না। বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানানো হলে তাৎক্ষণিক নৌকার সিলমারা দুটি ব্যালট জব্দ করা হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মীর হোসেন জানান, জাল ভোট দেয়া ও কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করায় ৫ জনকে বহিষষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও নোয়াখালী, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top