বিএনপির এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত: মির্জা ফখরুল
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৬; আপডেট: ২ মে ২০২৫ ২২:৩৫

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির এমপিরা জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে জাতীয় সরকার হবে। যারা আন্দোলন করেছে তাদের নিয়ে হবে। দেশের অর্থনীতি মেরামত করার জন্য সরকার কাজ করবেন। এ সরকার সব শেষ করে দিয়েছে, তা ঠিক করতে হবে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও দলটির গণসমাবেশ স্লোগান-মিছিলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকে জেলা মোটর মালিক সমিতি। নিকট দূরত্বের অধিকাংশই এসেছেন হেঁটে, আর দূরের নেতা-কর্মীরা ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহনের মাধ্যমে আসছেন সমাবেশস্থলে।
মির্জা ফখরুল বলেন, `শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। `সরকারকে সংসদ থেকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত` এখন শুধু ঘোষণা বাকী।
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ রংপুর ছিলো তাদের চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু খেয়ে ফেলেছে এই বাকশালী সরকার। ছোটবেলায় মুনতাসীর মামুনের নাটক ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’ দেখেছিলাম। সেখানে মূল চরিত্রে যে ছিল সে শুধুই খায়। সব খাবার শেষে কাগজ খেয়েছে। দলিল-দস্তাবেজ খেয়েছে। এমনকি টেবিল চেয়ারও খেয়েছে।
এই সরকারও তেমনি সব খেয়েছে। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তারেক জিয়াকে বিদেশ থেকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অন্যায়ভাবে বিএনপির ৬০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফখরুল বলেন, হাসিনা বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। ঘুষখোর, ভোট চোর। তাকে আর মানুষ দেখতে চায়না মানুষ। আজ কেন এ সমাবেশ? এর কারণ একটাই। ১৫ বছর ধরে অত্যাচার চালিয়েছে, সর্বনাশ করেছে। অর্থনীতি খেয়েছে। এখন বাংলাদেশ খাওয়ার পায়তারা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন কঠিন দুঃসময়। দেশে দুর্ভিক্ষ হলে মানুষ কোথায় যাবে? দেশে দুর্ভিক্ষ হলে সব দায় শেখ হাসিনার। ১৯৭৪ সালেও শেখ হাসিনার বাবার আমলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।
নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াতে চেয়েছিল এই সরকার। এখন চালের কেজি ৬০ টাকা। ডাল, ডিম, চিনিসহ শাক-সবজির দামও আকাশচুম্বী।
এসময় সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে করে ফখরুল বলেন, কিন্তু আমরা দেখছি আপনারা চিতল মাছ খান। বিদেশে যান। এসি রুমে থাকেন। শুধু মুখে বড় বড় কথা বলেন আপনারা।
গণসমাবেশ ঘিরে বাস চলাচল বন্ধের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। তারা বলেছেন, সরকার কৌশলে গণপরিবহন বন্ধ করে জনগণের জয়যাত্রা ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে।
পরিবহন ধর্মঘটে প্রমাণ করেছে, আর কোনো বাধাই কাজে লাগবে না। এখন সরকারকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে অথবা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, মানুষ এক মুহূর্তও এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে না। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে।
সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের কম্পন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খেলা হবে। আমরাও বলি, খেলা হবে। এই জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিজয়ী হবে।’
এতে প্রধান বক্তা হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: