জাতিসংঘসহ বিদেশি মিশনে বিএনপি’র চিঠি

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২৪ ১০:০৫; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ১১:০৭

ছবি : ফাইল

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার বিষয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি ঢাকাস্থ প্রতিটি বিদেশি মিশনেই একই চিঠি দিয়েছে দলটি। রোববার বিকালে ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি পাঠ করে শোনান বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার একমাত্র বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র, আর প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ কোনো তদন্ত, তথ্য বা সূত্র ছাড়াই প্রতিটি ঘটনার পর পর অবলীলায় ও একই সুরে অগ্নিসন্ত্রাসের দায় বিএনপি’র উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। নিজেদের সুপরিকল্পিত এই ধ্বংসযজ্ঞকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নকে উস্কে দিচ্ছেন, যা শেখ হাসিনার প্রতিহিংসামূলক বক্তব্যে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

গত ১৯শে ডিসেম্বর ট্রেনে মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং চার জন যাত্রী মারা যান। ঘটনার বিশ্লেষণে প্রতীয়মান যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। অগ্নিকা-ের দুই দিন আগেই, ১৯শে ডিসেম্বরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিশেষভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, ডাক্তার এবং এম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি’র নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়।
ডিএমপি’র এই প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ কেন নেয়া হয়েছিল, নাশকতার সুস্পষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনা তাদের কাছে কীভাবে এলো এবং তারপরও এটি রোধে কেন তারা কোনো ব্যবস্থা নিলেন না, জনমনে এসব প্রশ্ন রয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যতবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, আওয়ামী লীগও একই দিনে পরিকল্পিত নাশকতার উদ্দেশ্যে কর্মসূচি আহ্বান করেছে। আমরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বদা একটি অহিংস আন্দোলন বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছি এবং সকল উস্কানি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি।

গত ২৮শে অক্টোবর আমরা ঢাকায় একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে সারা দেশ থেকে গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আবারো প্রমাণ করেছিল, বিএনপি’র পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এবং একটি সত্যিকারের নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিব্রতকর পরাজয় অনিবার্য। আর তাই, আমাদের মহাসমাবেশকে বানচাল ও চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, সেদিন একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ পুলিশের চিহ্নিত অংশ।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মুখোশধারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় এবং পুলিশ হাসপাতালের সামনে বাস ও গাড়িতে আগুন দেয়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যাও করে, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশের কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি, যা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়। এই নৃশংসতার পর, বিএনপি’র নেতৃত্বে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ, ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জোরদারের প্রস্তুতি নিলে আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ জুড়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের এক নোংরা কৌশল অবলম্বন করে।

অগ্নিসংযোগের ঘটনা বন্ধ করতে বা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে, ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে, পুলিশের সহযোগিতায় ও পরিকল্পিতভাবে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে। অগ্নিসন্ত্রাসের সময় নীরব দর্শক হিসেবে পুলিশের মৌন সহযোগিতা, নাশকতা শেষে অপরাধীদের অবলীলায় ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়া এবং পরবর্তীতে এর দায়ে বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রায় ২৫,০০০ গণগ্রেপ্তার ও ২৭ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা- গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের আলামত স্পষ্ট।

এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরা তালিকা করে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের আটক করছে। বিশেষত অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগে তারা ছাত্রদল ও যুবদলের সদস্যদের টার্গেট করছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। পুলিশের দাবি করা তথাকথিত সহিংসতার স্পট থেকে অনেক দূরে, ভিন্ন কোনো এক জায়গা থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রতারণামূলকভাবে সেই গায়েবি ঘটনার সঙ্গে আমাদের ছেলেদের সম্পৃক্ত করে অভিযোগ বানাচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বানোয়াট অভিযোগ ও গায়েবি মামলাসমূহ সাজানো হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপি’র আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের যৌথ এই উদ্যোগ আসলে সরকারের মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। এটি আজ দৃশ্যমান যে, সরকার একটি সিস্টেম্যাটিক ফরমুলা অনুসরণ করছে। প্রথমে তারা মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে নাশকতার ঘটনা তৈরি করে।

এরপর বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহের উপর দায় চাপিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় প্রদান করে ও আমাদের চলমান আন্দোলনকে বিতর্কিত করার একটি হীন প্রচার চালায়। এই পরিকল্পনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দেশব্যাপী অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং এই নাশকতাগুলোকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেয়া।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্বকারী দল বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, অবিশ্বাস্য এই হীন অপবাদ চাপিয়েই পুলিশ কাল্পনিক মামলা এবং বানোয়াট অভিযোগ নথিভুক্ত করে চলেছে।

এমনকি ইতিমধ্যে বিএনপি’র যেসব সদস্য মারা গিয়েছেন বা গুমের শিকার হয়েছেন, সেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। কোনো নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সাক্ষী ছাড়াই মিথ্যা পুলিশি সাক্ষ্যকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বিচার বিভাগের ধারাবাহিক পূর্বপরিকল্পিত এই রায়সমূহ আইনের অনুশাসনের সার্বিক অবক্ষয়কে পুনঃপ্রমাণিত করে তুলছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৮শে অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের অগ্নিসন্ত্রাসের ১০টি উদাহরণ হলো: (১) ২৮শে অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ তা-বে বেশ কয়েকটি যানবাহন ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একটি এঞঝ গাড়ির চালক ও সহকারী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, পুলিশ তাদের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, (২) ২৮শে অক্টোবর মালিবাগে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

(৩) ২৮শে অক্টোবর হাইকোর্টের সামনে আগুন দেয়া আরেকটি বাসের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের পাঁচ যুবক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

(৪) ২৮শে অক্টোবরে কাকরাইলে একটি মোটরসাইকেলে করে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এসে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। চালকের বর্ণনা অনুযায়ী, অগ্নিকা- দেয়া ব্যক্তিরা পুলিশের পোশাক পরা ছিল।

(৫) ২৮শে অক্টোবরের সহিংসতায় পুলিশের সঙ্গে, অবৈধভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে, অস্ত্রসহ যুক্ত হয়েছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু ছবির পাশাপাশি, পুলিশের পোশাক পরা এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নিজের ছবি ফেসবুকে সগৌরবে আপলোড ও পুলিশের সঙ্গে যৌথ আক্রমণে অংশগ্রহণের জানান দেন।

(৬) ৩১শে অক্টোবর পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও, তাদের প্রত্যক্ষ মদতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের
কাছে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। অনুরূপ আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, বাংলামোটর মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে তাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে ও সমর্থনে, অরেকটি বাস জ্বলছে।

(৭) ৬ই নভেম্বর ফেনীতে একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতেনাতে ধরা হয়, সেখানে তিনি চট্টগ্রামে একটি চিনি কারখানা থেকে আগত একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করছিলেন।

(৮) ১৪ই নভেম্বর নাটোরে একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে মশাল ও মুখোশসহ পুলিশ আটক করে, সেই সঙ্গে তার পরিত্যক্ত ঘর থেকে আরও ৬টি মশাল, ৩টি মুখোশ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে। পরে আওয়ামী লীগের কর্মী জেনে পুলিশ তাকে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়।

(৯) ২১শে নভেম্বর ভোলায় এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও একজন।

(১০) ২৪শে ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মারা
যান। পুলিশ পরে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য সমস্ত প্রমাণ ধ্বংস করে ফেলে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top