আজ খুশির ঈদ

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০৫; আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০৭

ছবি: ফাইল

আজ শনিবার সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আপনজনের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নিচ্ছে সবাই।

অনেকে গ্রামেও ছুটে গেছে এই উদ্দেশ্যে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।  খবর নয়া দিগন্তের। 

ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ ফিরে আসা। এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বারবার ফিরে আসে। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো আল্লাহ তায়ালা এ দিবসে তার বান্দাদেরকে নিয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করেন ও বারবার তার ইহসানের দৃষ্টি দান করেন। হিজরি মাস চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল।

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেন, চাঁদের মাস ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায় তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।

ইসলামে ঈদের প্রচলন : আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিয়ামত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: যখন মদিনাতে আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীর দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। হজরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ সা: জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুই দিনের কী তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসী উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ -আবু দাউদ: ১১৩৪।

শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তির জন্য যে দুটো দিন ছিল আল্লাহ তায়ালা তা পরিবর্তন করে এমন দুটো দিন দান করলেন যে দিনে আল্লাহর শুকরিয়া, তার জিকির, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সাথে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজ-সজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করা হবে। বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থে ইবনে জারির (রা:)-এর বর্ণনা মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে হজরত মুহাম্মদ (সা:) প্রথম ঈদ উদযাপন করেছেন।

দেশে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি : ঈদে সবাই নতুন কাপড় পরেন। এজন্য গত কয়েক দিনে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ করার মতো। কয়েকটি মার্কেটে আগুন লাগার পরও নতুন কাপড় কিনতে শপিংমল, বিপণিবিতানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে আর্থিক অনটন ও দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ার কারণে অনেকের ভাগ্যে জোটেনি নতুন কাপড়। অবশ্য অনেক রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দরিদ্রদের মাঝে নতুন কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

সর্বশেষ নাড়ীর টানে গ্রামের দিকে ছুটছে কর্মের প্রয়োজনে ঢাকায় থাকা লাখ লাখ মানুষ। মা-বাবাসহ পরিবারের সান্নিধ্যে পাওয়ার আশায় সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ছুটে চলছে মানুষ।

এ দিকে ঈদের জন্য গত মঙ্গলবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।

ঈদে করণীয় : ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদতে পরিণত হতে পারে।

ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা : আমাদের দেশের অনেকেই ঈদের রাতে আনন্দ করে সকালে ফজরের নামাজ আদায়ে গড়িমসি করে। অথচ ফজরের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, যদি তারা ইশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারত তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দু’টি নামাজের জামাতে শামিল হতো। -সহিহ বুখারি : ৬১৫

ঈদের নামাজ আদায় করা : ঈদের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঈদের নামাজ আদায় করা। প্রকৃতপক্ষে একজন ঈমানদার বান্দা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বেশি আনন্দিত হয়ে থাকেন। হাদিসে এসেছে, ‘নবী করিম সা: ঈদুল ফিতরের দিনে বের হয়ে দুই রাকাত ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এর পূর্বে ও পরে অন্য কোনো নামাজ আদায় করেননি।’-সহিহ বুখারি : ৯৮৯

ঈদের দিন গোসল করা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ নামাজ আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা:) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, ‘তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।’ -সুনান বায়হাকি: ৫৯২০

হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া হলো সুন্নত। হজরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।’ -তিরমিজি : ৫৩৩।। উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘নবী করিম (সা:) ঈদের দিনে ফেরার পথ বিপরীত করতেন।’ -সহিহ বোখারি: ৯৮৬

ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে নামাজ আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। হজরত বুরাইদা (রা:) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম সা: ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। ’-তিরমিজি : ৫৪৫

ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা : ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন- ক. হাফেয ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, সাহাবারা ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থ- আল্লাহ তায়ালা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। খ. ‘ঈদ মোবারক’ ইনশা আল্লাহ। গ. ‘ঈদুকুম সাঈদ’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।

ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে তাকবির পাঠ করা : তাকবির পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। তাকবির হলো- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। লা-ইলাহা ইলাল্লাহ। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। ওয়া লিল্লাহিল হামদ। বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্ণিত, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সা: ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। ’ -মুসতাদরাক : ১১০৬

নতুন বা পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা : ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা। এ দিনে সব মানুষ একত্রে জমায়েত হয়, তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হলো তার প্রতি আল্লাহর যে নিয়ামত তা প্রকাশ করণার্থে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার ওপর তার প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।’-সহিহ আল জামে: ১৮৮৭। ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, ‘নবী করিম সা: দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন।’ -যাদুল মায়াদ

ঈদের খুতবা শোনা : ঈদের খুতবা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। এতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। হজরত আবদুল্লাহ বিন সায়েব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী করিম সা:-এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন, আমরা এখন খুতবা দেবো। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে।’ -আবু দাউদ : ১১৫৭

দোয়া ও ইস্তেগফার করা : ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালা অনেক বান্দাহকে মাফ করে দেন। মুয়ারিরক আলঈজলী (রাহ:) বলেন, ‘ঈদের এ দিনে আল্লাহ তায়ালা একদল লোককে এভাবে মাফ করে দেবেন, যেমনি তাদের মা তাদের নিষ্পাপ জন্ম দিয়েছিল। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, তারা যেন এ দিনে মুসলিমদের জামাতে দোয়ায় অংশগ্রহণ করে।’-লাতাইফুল মায়ারিফ

ইয়াতিম ও অভাবীকে খাবার খাওয়ানো : ইয়াতিমের খোঁজখবর নেয়া, তাদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং সম্ভব হলে তাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেয়া। এটা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

ঈদ একটি ইবাদত। আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ। শরিয়াসম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ করার বিষয়ে কুরআনে এসেছে, ‘বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত, সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।’ -সূরা ইউনুস : ৫৮।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top