নিম্নমানের কাগজে ছাপা বই নিয়ে ক্ষোভ
রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা এখনও হাতে পায়নি সব বিষয়ের বই
বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২৩:৪০; আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২৩:৫১
                                রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা এখনও হাতে পায়নি সব বিষয়ের বই। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ক্লাস শুরু হলেও পরিপূর্ণভাবে শুরু করা যায়নি পাঠদান কার্যক্রম। রাজশাহীর এগারোটি থানাতেই এ চিত্র তথ্য সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নিম্নমানের কাগজে ছাপা বই নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুলে ২০২৩ সালের বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মধ্য দিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রমর শুরু হয়। রাজশাহী নগরীর প্রথম শ্রেণীর স্কুল গুলোতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ের বই হাতে পেলেও থানা পর্য ায়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখনও হাতে পায়নি সকল বিষয়ের বই। এক তথ্য মতে জানা গেছে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়নি অর্ধেক বই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সকল বিষয়ের বই পৌঁছাতে অন্তত আরও ১৫ দিন সময় লাগবে।
রাজশাহী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ১ হাজার ৫৭টি। এ পরিমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার। আর বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার।
এছাড়া জেলায় রয়েছে ৬৪৩টি মাধ্যমিক স্কুল এবং ২০২টি দাখিল মাদ্রাসা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল (ষষ্ঠ থেকে নবম) পর্যায়ে ২ লাখ ২৫ হাজার ৪০ এবং দাখিলে (ষষ্ঠ থেকে নবম) শিক্ষার্থী রয়েছে ৪১ হাজার ৮৯০ জন। এ পরিমাণ শিক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিকে ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ এবং দাখিলে ৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৪৫টি পাঠ্য বইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সূত্রের তথ্য মতে, এসকল শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের বই এখনো হাতে পায়নি।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পহেলো জানুয়ারি বই উৎসবের দিন রাজশাহীতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক বই এসেছে। এছাড়া বিজ্ঞান এবং ধর্ম বিষয়ের বই এখনো রাজশাহীতে পৌঁছেনি। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ার কারণে ছাপাখানা থেকে বই ছাপাতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া ধর্ম বইয়েরও কিছুটা পরিবর্তনের কারণে সেটিও আসতে দেরি হচ্ছে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন। এর ফলে পাঠাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ বছর অন্য বছরের তুলনায় বইয়ের কাগজ অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ছাপাও খুব খারাপ বলে তারা অভিযোগ করেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চাহিদামতো বই সরবরাহ পাইনি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে হয়ত পাঠদান কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে পুরাতন বই দিয়ে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, আজ বুধবার দুপুরে সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে আমার কার্যালয়ে ডেকেছি। তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। আশা করছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বইয়ের সংকট থাকবে না। জেলার সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলার শহীদ আবুল কাশেম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বই হাতে পায়নি। একই অবস্থা সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। একই উপজেলার শাহার বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও বই পায়নি। মঙ্গলবার তারা স্কুলে গিয়ে বই না পেয়ে ফিরে গেছে। ওই স্কুলে ৫০ শতাংশ বই এসেছে। বাকি ৫০ শতাংশ বই এখনো আসেনি। বাঘা উপজেলার আড়ানি সরকারি মনোমোহীনি উচ্চ বিদ্যালয়েও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। একই উপজেলার চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো অর্ধেক বই পায়নি বলে জানা গেছে। অপর দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। উপজেলার পিরিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে। তবে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছয় বিষয়ের মধ্যে এখনো তিন বিষয়ের বই পায়নি। পাশেই পিরিজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক বিষয়ের বই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। জেলার অন্যান্য উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: