দীপু দাস হত্যার প্রতিবাদ : ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন
ভারতে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশনের সামনে উত্তেজনা
মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:১২; আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:১৪
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ভারতের নয়াদিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের আশপাশে প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশনের মূল ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে দিল্লি পুলিশ তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। সরকারি বাস, লোহার ব্যারিকেড ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে একাধিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা কমপক্ষে দুটি ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীদের হাইকমিশন চত্বর থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে আটকে রাখা হয়। তবে কয়েকজন বিক্ষোভকারী ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে দিতে কূটনৈতিক স্থাপনার দিকে এগিয়ে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জের অভিযোগও উঠেছে।
এদিকে আনন্দবাজার ডট কম জানায়, দিল্লিতে বিক্ষোভ চলাকালে জমায়েতের মধ্যেই মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। সকাল থেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা ছিল। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা হয় পুরো এলাকা। অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে।
শুধু দিল্লিতেই নয়, কলকাতাতেও একই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। কলকাতার বেকবাগান এলাকায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের অদূরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড টপকে এগোনোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বাহিনী নামাতে হয়।
দিল্লি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে আমরা আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম। বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে একাধিক স্তরের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহে দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতে বিভিন্ন সংগঠন। প্রথমে সীমিত আকারে দিল্লিতে ২০–২৫ জন যুবক প্রতিবাদ জানান। পরে ভিএইচপি ও বজরং দল আনুষ্ঠানিকভাবে বড় আকারের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক পর্যায়েও তৎপরতা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ময়মনসিংহের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশনের সামনে বিক্ষোভ দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে চাপ তৈরি করছে। কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উভয় দেশের প্রশাসনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র ও ছবি: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার ডট কম।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: