৬ মাসে বেড়েছে ২.৯৪ শতাংশ

রেমিট্যান্স আহরণে সিদ্ধান্ত মানছে না ব্যাংকগুলো

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:২৪; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ০৪:৪৪

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ দর বেঁধে দিয়েছিল ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। বলা হয়েছিল রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংকগুলো ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দেবে। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে।

সে হিসেবে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারে দাম সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ২৪ পয়সা পর্যন্ত দিতে পারে। কিন্তু এ দর বেশির ভাগ ব্যাংকই মানেনি। ক্ষেত্রবিশেষ রেমিট্যান্স আহরণে ১২২ টাকা থেকে ১২৩ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স আহরণ করেছে। আর এ কারণেই গত ডিসেম্বর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার, যা আগের মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে এসেছিল ১৯৩ কোটি ডলার। আর এ সুবাদে ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২ দশমিক শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে শৃঙ্খলা আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এবিবি ও বাফেদা ডলারের দর নির্ধারণ করে দেয়। এক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক তাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংগঠন দু’টি থেকে একাধিকবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স আহরণ করার দায়ে ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কঠোর অবস্থানের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

দেখা যায় গত জুলাই মাসে যেখানে ১৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, পরের মাসেই অর্থাৎ আগস্টে তা এক লাফে কমে হয় ১৬০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনড় থাকায় পরের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো কমে হয় ১৩৩ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ বড় পতনের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ডলারের জন্য ব্যাংকগুলোতে হাহাকার পড়ে যায়। অনেক ব্যাংক বকেয়া এলসির দায় পরিশোধ করতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়।

তবে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সহযোগিতা করেনি বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। বাধ্য হয়ে এবিবি ও বাফেদার সিদ্ধান্ত অমান্য করে বেশি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করে বেশির ভাগ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে। আর এ কারণেই অক্টোবর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো ঘুরে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো ফি মাসে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার করে আসতে থাকে। যেমন, গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ডলার, নভেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১৯৩ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বর রেমিট্যান্স আসে প্রায় ১৯৯ কোটি ডলার। আর এ কারণেই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে দেশে মোট রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৮০ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৪৯ কোটি ডলার।

বাফেদা ও এবিবির নিয়ম অমান্য করে এক শ্রেণীর ব্যাংক বেশি হারে রেমিট্যান্স আহরণ করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছে নিয়ম মেনে চলা ব্যাংকগুলো। যেমন, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বরাবরই রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ছিল। কিন্তু নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স আহরণ না করায় এখন রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ ২০ ব্যাংকের মধ্যেও নেই। এ বিষয়ে ১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমও স্বীকার করেন, তারা সিদ্ধান্ত পুরোপুরি মানতে গিয়েই এমন বেকায়দায় পড়েছে।

তবে, তিনি বলেন, যেসব ব্যাংক তাদের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করছে। ইতোমধ্যে ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেউ কম দামে রেমিট্যান্স আহরণ করছে, আবার কেউ বেশি দরে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। যারা বেশি দরে রেমিট্যান্স আহরণ করছে তারা আবার বেশি দরে গ্রাহকের কাছে বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। আবার যারা কম দরে রেমিট্যান্স আহরণ করছে তারা কম দরে ডলার বিক্রি করছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হওয়ার পরিবর্তে মূলত বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

এতে একদিকে পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। অপরদিকে, নিয়ম পরিপালন করতে গিয়ে কিছু ব্যাংক বেকায়দায় পড়ে গেছে। তারা রেমিট্যান্স আহরণে পিছিয়ে পড়ায় ডলার সঙ্কটে পড়েছে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান ভুক্তভোগী ব্যাংকাররা।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top