কালের গর্ভে বিলিন গ্রামীন ঐতিহ্য কুয়া, ইঁদারা বা ইন্দারা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:১১; আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৮

কুয়া বা ইন্দারা। ছবি: সংগৃহীত

বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কুয়া বা ইন্দারা যা এক সময় পানের জন্য সুপেয় পানির একমাত্র উৎস ছিল। বিকেল বেলা গ্রাম বাংলার প্রতিটি মা-বোনেরা সন্ধ্যা বেলায় কলসি নিয়ে কুয়া থেকে আনার সে চিত্র এখন আর দেখা যায় না।

বহু প্রাচীন বাড়িগুলিতে আজও দেখা পাওয়া যায় মজে যাওয়া কুয়া বা ইঁদারার। প্রাচীনকালে মানুষ যখন ডোবা ও নদীর অপরিশুদ্ধ পানি পান করতো তখনকার বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণাকার্য সম্পন্ন করে কূপের জন্ম দেন। জমিদাররা ইঁদারা থেকে প্রাপ্ত পানিকে আরও পরিশুদ্ধ করতে ইঁদারার মধ্যে পাইপ লাগিয়ে পানি উত্তোলন করতো। এই কারনেই পুরানো জমিদার বাড়িতে বহু পুরোনো কুয়ার দেখা আজও মিলে। পর্যায়ক্রমে মানুষ যখন সভ্য, সুশিক্ষিত ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী হলো তখন নলকূপের সৃষ্টি হলো। সংস্কৃত ইন্দ্রাগার শব্দটি ইন্দ্র ও আগার থেকে এসেছে। ইন্দ্র অর্থ বৃহৎ এবং আগার অর্থ পাত্র অর্থাৎ ইন্দ্রাগার শব্দের অর্থ হলো বৃহৎ কূপ।

গ্রামের মানুষের সুপেয় বা খাবার পানির সবচেয়ে ভাল মাধ্যম ছিল এখনো কিছু কিছু গ্রামে দেখা যায় কুপ বা ইন্দ্রা বা ইঁদারা ও পাতকুয়া। ১০-১৫ ফুট গোল গর্ত করে প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত ( বরেন্দ্র অঞ্চলের হিসাব) মাটি খুড়ে কুপ বা ইন্দ্রা বা ও পাতকুয়া তৈরি করা হত। মাটির নিচের ঝর্না ছিল এই কুপের পানির প্রধান উৎস। পাতি কুপ ও ইঁদারার মধ্যে পার্থক্য হল , ইঁদারার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত ইট বা রিং( সিমেন্ট বালি দিয়ে তৈরি গোল কাঠামো) দিয়ে বাঁধায় করা হত আর পাতি কুপ বাঁধায় করা হত না। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় আশির (৮০) দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত গভীর কূপ বা কুয়া থেকে। তাই তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছিলো এই কুয়ার স্বচ্ছ পানি।

আঞ্চলিক ভাষায় এই কুয়াকে বলা হয় ইন্দারা। এই সুপেয় পানি পানের অভাব বোধ থেকে এই অঞ্চলের মানুষ খনন করতো গভীর কুয়া বা ইন্দারা।খাল-বিল,নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগ্রহ করতো ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পানি। কিন্তু গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে, যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। কিছুদিন আগে যে বাড়িতে কুয়া ছিল সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়িতে কুয়ার বদলে টিউবওয়েল পাওয়া যায়। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে পানি তুলা হয়।পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোন প্রাণিই বাঁচতে পারে না।

মানুষ বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করে। রান্নার কাজে,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধোয়া-মোছার কাজে, ফসল ফলাতে, মৎস খামারে এবং কলকারখানায় পানির ব্যবহার হয়। প্রতিটি খাদ্য তৈরীতে পানির প্রয়োজন। আর এ খাদ্য তৈরীতে দরকার আর্সেনিকমুক্ত পানি। এমনকি তৃষ্ণা মিটাতে দরকার সচ্ছ পানি। সচ্ছ পানির কয়েকটি উৎসের মধ্যে একটি হলো কূপ বা কুয়া।

আজ থেকে অনেক দিন আগে গ্রাম বাংলার প্রতিটি স্থানে পানির জন্য কূপ বা কুয়া ছিল। মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। কুয়ার পানি দিয়ে মানুষ তৃষ্ণা মিটাতো। এ পানি দিয়ে রান্না-বান্নার কাজ চালাতো। কিন্তু গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর বাড়ি বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায়না। কিছুদিন আগে যে বাড়িতে কুয়া ছিল সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। এখন প্রতিটি বাড়িতে কুয়ার বদলে টিউবওয়েল পাওয়া যায়। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিশিন দিয়ে পানি তুলা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে মানুষ অনেক দূর এগিয়েছে। শহর অঞ্চলে এখন টিউবওয়েল পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই বৈদ্যুতিক মিশিন দিয়ে পানি তুলা হয়।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবন মান উন্নত হচ্ছে কিন্তু হারিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্য। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করছি কত রকমের নামি দামি কোম্পানির ফিল্টার কিংবা বিশুদ্ধ করছি ফুটিয়ে, পানিতে ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং, পটাশ বা ফিটকিরি ও আয়োডিন মিশিয়ে। এগুলো কতটা কার্যকরী পদ্ধতি বিশুদ্ধ পানির জন্য। অথচ নব্বই দশক পর্যন্ত কুয়ার পানি ব্যবহার ছিল সবর্ত্রই যা ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। আজ হাসপাতালগুলোতে রোগীর যে লম্বা লাইন যার বড় অংশই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত।

পৃথিবীর অন্যতম কূপ বা কুয়া জমজম কূপ। সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ কূপ। পবিত্র কাবা ও এই কূপের মধ্যে দূরত্ব হলো মাত্র ৩৮ গজের। এই কূপের কাছে একটি শক্তিশালী পাম্পিং মেশিন বসানো হয়েছে। সে মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে একটি প্রশস্ত জায়গায় নিক্ষেপ করা হয়। সেখান থেকে লাখ লাখ মানুষ তৃপ্তি ভরে পানি পান করে এবং পাত্রে ভরে নিয়ে যায়। পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ এ কূপ আজও মানুষের কাছে তৃপ্তিময়, সুপেয় পানির উৎস। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর ধরে চলে আসছে এই কূপ। বলা হয় আল্লাহ-তায়ালার সরাসরি প্রদত্ত নিয়ামত এই কূপ। শুধু এই কূপ নয় বাংলাদেশসহ পৃথিবী সুপেয় পানির উৎস সকল কূপ বা কুয়াই স্রষ্টার অশেষ রহমত ছিল। যা এই আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে বিলীন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top