মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রীতির হাওয়া

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৫০; আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ১১:২৫

ছবি: সংগৃহীত

এক কূল ভাঙলে আরেক কূল গড়ে। প্রচলিত এ প্রবাদটি বিশ্বরাজনীতিতেও কম সত্য নয়। একদিকে যখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ-আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের সাজানো মসনদ, উলটো দিকে তখন মধুমাসের সৌরভ।

ঘর সাজানোর আয়োজন। ভাঙা সম্পর্ক মেরামতের তোড়জোড়। পশ্চিমা শাসন দম্ভে উত্তাল বিশ্বরাজনীতির এ পোড়া মৌসুমেই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির নতুন হাওয়া লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যের ‘দুঃখের কাঁটা’ সৌদি আরব-ইরান, কাতার-বাহরাইনে। চীনের হাত ধরে গত মাসেই শত্রুতা ভুলে মিত্রের সুরা পান করে ইরান-সৌদি আরব।

বেইজিংয়ে আয়োজিত মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তির মিলন ‘জলসায়’ সেদিনই যেন শান্তির গীত ছড়িয়ে পড়ে ভূখণ্ডের বাকি দেশগুলোতে। ওই মঞ্চেই সই হওয়া শান্তিচুক্তির জেরেই বুধবার গত সাত বছরের মধ্যে রিয়াদে প্রথমবারের মতো ইরানের দূতাবাসের দরজা খুলল সৌদি আরব। চাওয়া-পাওয়ার অঙ্ক ভুলে একই দিনেই আবার জোড়া লাগল কাতার-বাহরাইনের ভাঙা মনও। শেষ হলো দুই রাষ্ট্রের ছয় বছরের অভিমান।

বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে নিজেদের দূতাবাসের দরজা খুলেছে ইরান। বলেছেন, রিয়াদে ইরানি দূতাবাস ভবনের ভারী গেটটি খোলা ছিল। একটি দল এদিন দূতাবাস চত্বর পরিদর্শন করেছে। পরে একটি সাদা ট্রাক গেটে আসতে দেখা যায়। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর কূটনৈতিক মিশনটি চালু হয়। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইরানের প্রতিনিধি দল রিয়াদ ও জেদ্দায় দূতাবাস এবং কনস্যুলেট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সৌদি আরব শিয়া মতাবলম্বী এক ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ২০১৬ সালে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানিরা। পরে ওই বছর ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। একই সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় রিয়াদ। পাশাপাশি তেহরান থেকেও নিজেদের দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে নেয় রিয়াদ।

এর পর থেকে ইরানের মিশনটি বন্ধ ছিল। ২০১৫ সালে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার এক বছর আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু হয়। ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি-সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজধানী সানার দখল নেওয়ার পর দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি ও আমিরাত। সেই সময় ইরান হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করে রিয়াদ।

ইয়েমেনের এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের সীমান্তের শহরগুলোতে সশস্ত্র ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রেষারেষি ভুলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে কাতার-বাহরাইনও। ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও সশস্ত্র দলগুলোকে মদদ দিচ্ছে কাতার।

এমন অভিযোগে ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আরব বিশ্বের চার দেশ সৌদি আরব, মিসর, আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। তবে সশস্ত্র দলগুলোকে মদদ দেওয়ার বিষয়টি সবসময় অস্বীকার করেছে দোহা।

একপর্যায়ে এই চার দেশের মধ্যে বাহরাইন বাদে বাকি তিন দেশ (২০২১ সালে) কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। তবে কাতার এবং আরব আমিরাত এখনো দূতাবাস চালু করেনি। বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসির) সদর দপ্তরে বৈঠক করেন দুই বাহরাইন এবং কাতারের প্রতিনিধিরা।

এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স এবং কাতারের আমির ফোনে কথা বলেন। নিজেদের মধ্যে থাকা ঝামেলাগুলো মেটানোর উদ্দেশ্যে এই দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top