আবারো পেছালো রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪ ১৬:৩২; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৬:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

পরিকল্পনা অনুসারে শেষ হচ্ছে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ২০২৫ সালের শেষ দিকে উৎপাদনে যেতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট।

সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও।

এমন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ সমন্বয় কমিটির সভায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া কাজে গতি আনতে ডলারের পরিবর্তে টাকায় বিল পরিশোধের বিষয়ে মূল চুক্তির অধীন এ মাসের শুরুর দিকে একটি অতিরিক্ত চুক্তি হয়েছে।

রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডলার-সংকটের এটি নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। এতে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জরিমানা (বিলম্ব ফি) হয়। যদিও তা মওকুফ করে দিয়েছে রুশ ঠিকাদার।

পরবর্তী বিল নিয়মিত পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি টাকা নিতে রাজি হয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। টাকা জমা দিতে সোনালী ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। তবে পাওনা অর্থের কত ভাগ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা যাবে, তা চুক্তিতে নির্ধারণ করা নেই। ঠিকাদার তার প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত চাহিদা জানাবে।

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর গত বছর ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এরপর এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। এটি বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্প শেষ করার আগে একই এলাকায় আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।

পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর গত বছর ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এরপর এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে। এটিও পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেওয়া হয়েছিল। এখন দুটি ইউনিটেরই উৎপাদন পেছাচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে চুল্লিপাত্রে জ্বালানি প্রবেশ করানো শুরু হবে, চলবে বেশ কিছুদিন ধরে। তিন মাস পরে এ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এরপরে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হতে পারে।

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজটি করছে দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে প্রায় তিন বছর পর। ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) চুক্তির আওতায় কাজটি হওয়ার কথা ছিল।

শুরুতে এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণের ছাড়পত্র পেতে চলে যায় ১৩ মাস। তাদের মনোনীত ঠিকাদার অনেক বেশি দরপ্রস্তাব করে। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা ও ঠিকাদারের অগ্রিম প্রদানে দেরি হয়েছে।

পিজিসিবি সূত্র বলছে, উৎপাদন শুরুর আগে সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হবে। প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-বাঘাবাড়ী ৬০ কিলোমিটার, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ও রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৪৪ কিলোমিটার লাইন করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্থলভাগের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পদ্মা পারাপারের দুই কিলোমিটার কাজ বাকি আছে।

নদীতে চারটি টাওয়ারের মধ্যে দুটি বসানো হয়েছে, বাকি দুটি বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-ঢাকা ১৪৭ কিলোমিটার লাইনের কাজ চলছে। এর মধ্যে যমুনা নদী পারাপারে ১৪ কিলোমিটার লাইন আছে।

রূপপুর প্রকল্পে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ-সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।

২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে প্রথম ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপন করা হয়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top