রাজশাহীতে জ্বর হয়ে ৪ দিনে দুই বোনের মৃত্যু, মা-বাবা আইসোলেশনে

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:২১; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:২৯

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪ দিনের ব্যবধানে ২ বোনের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের মধ্যে বড় মেয়ে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যায় এবং ৪ দিন আগে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ছোট মেয়েকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

শিশু ২ জনের নাম মুনতাহা মারিশা (১ বছর ১১ মাস) ও মুফতাউল মাশিয়া (৪ বছর ৯ মাস)।

তাদের বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

ভাইরাসজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণ করছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হয়েছিল তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এমন অবস্থায় দুই শিশুর মা ও বাবাকে কোথাও যেতে না করে দিয়ে হাসপাতালেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বিভাগের চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, ‘ধারণা করা হচ্ছে- বাচ্চা দুটো নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুরের রস খায়নি। তবে কুড়িয়ে পাওয়া বরই না ধুয়ে খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা এবং তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে আইসিইউতে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। এরপর শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিশুদের মা পলি খাতুন বলেন, ‘১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দেয়। না ধুয়েই তারা খেয়েছিল। সে দিন তারা ভালোই ছিল, খেলাধুলা করেছে।’

তিনি আরো বলেন, পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) যাচ্ছিলেন। সিএমএইচে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, সে আর নেই।

পলি খাতুন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।’

ছোট মেয়ে মাশিয়ার শরীরেও ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠছিল জানিয়ে পলি খাতুন বলেন, ‘মারিশার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ আমি আগে কখনো দেখিনি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুই বোনই বার বার পানি খাচ্ছিল।’

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বছর এ পর্যন্ত রাজশাহীতে কেউ নিপাহ ভাইরাসে মারা গেছেন এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা সঠিক যে বাচ্চা দুটো কোনো একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। অসুস্থ হওয়ার আগে এটা বুঝা যায়নি।’

তিনি আরো বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা দুটোর বাবা-মাকে বাসায় যেতে দেয়া হয়নি। হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top