প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, আতঙ্কিত নগরবাসী

ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে রাসিকের ওষুধ সংকট চরমে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ | প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ০০:৫৪; আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

ফাইল ছবি

প্রতিবছর আক্টোবর-নভেম্বরে বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। মাস হিসেবে চলছে ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। অথচ রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় থমকে আছে মশা নিধন কার্যক্রম। যার কারণে প্রতিনিয়ত হাসপাতালসহ বাসা বাড়িতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সাথে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দিনে-রাতে মশার তীব্র উৎপাতে নিদারুণ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু রাতের বেলায় নয়, দিনেও অনেকেই ঘরে মশারি টানিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। তবু মশার কামড় থেকে নিস্তার নেই। যার কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মশাবাহিত নানা রোগের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪০ জন। শুধুমাত্র রামেক হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ৭০ জন। এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দুজনই রামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার মশার উপস্থিতি বেশি। স্থানীয়ভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গুর লার্ভাও পাওয়া গেছে। এবছর অন্য বছরের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। অথচ এতো কিছুর পরেও ওষুধসংকটের দোহাই দিয়ে রাসিকের পক্ষ থেকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। নগরীর ড্রেনগুলোতে পানির কোনো প্রবাহ নেই। স্রোত থাকলে মশার লার্ভা ভেসে নদীতে বা খালে চলে যেত। ড্রেনের বদ্ধ পানিতে সহজেই মশা বংশ বিস্তার করছে। নগরবাসীর অভিযোগ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শোবার ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার, অফিস, হাসপাতাল- কোথাও মশা থেকে নিস্তার নেই। কিন্তু সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের তথ্যমতে, মহানগরীতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেন আছে। এসব ড্রেন ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যবহার করা হয় লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টি সাইড নামের মশা নিধনের দুই ধরনের ওষুধ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাসিকের কাছে সরবরাহ করা হয় এক হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৬০০ লিটার অ্যাডাল্টি সাইড। সেই ওষুধের বর্তমানে মজুত আছে ১০০ লিটার লার্ভিসাইড ও ২০০ লিটার অ্যাডাল্টি সাইড। যা দিয়ে পুরো নগরীর এডিস দমন কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। তবে ওষুধের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রাসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ জানান, প্রতি বছর ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লার্ভিসাইড ও ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অ্যাডাল্টি সাইড কিনতে হয় রাসিককে। এসব প্রয়োগ ও কেরোসিন ডিজেল মিলে গড়ে প্রতিবছর মশা মারতেই রাসিকের খরচ হয় এক কোটি টাকা।

রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ জানায়, চাহিদা মতো ওষুধ নাই। মাত্র সাতদিন আমার অ্যাডাল্টি সাইড প্রয়োগ করতে পারবো। এজন্য এবার আমার ওষুধ প্রয়োগ করতে পারিনি। সামনে ব্রিডিং মৌসুমে এটি প্রয়োগ করা হবে। লার্ভিসাইট আমরা প্রয়োগ করছি। এটিও ডিসেম্বর পর্যন্ত চালাতে পারবো। এরপর আমাদের ওষুধ নেই।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মো. হুমায়ন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওষুধ আছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি। এসব ওষুধ কিনতে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পেয়েছি। এখন আমরা দরপত্র দেবো এবং দ্রুতই ওষুধ কিনে নেবো।
 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top