বৃত্তির টাকায় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০২১ ০০:৪৭; আপডেট: ২১ জানুয়ারী ২০২১ ০৩:২৭

রাজশাহীর মেয়ে ঐশী তাবাসসুম। পড়াশোনা কম্পিউটার টেকনোলজিতে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। পড়াশোনার পাশাপাশি হয়ে উঠেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে। কাজ করছেন রাজশাহী সিল্ক, মসলিন ও হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে। কাঠ মুকুট নামে এফ কমার্স ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন। আজকের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা তাবাসসুমের-

আমার আম্মুর বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরীর কারণে, ছোট্ট থেকেই প্রায় একা থাকতে হয়। আমি বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। সে জন্যই একাকীত্ব দূর করার জন্য ৬ বছর বয়স থেকেই নাচ,গান ও আঁকাআঁকির স্কুলে আমাকে ভর্তি করে দেয় ব্যাস্ত থাকার জন্য।

তারপর, আমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা যেমন, আমার স্কুল, আম্মুর অফিস ও উপজেলায় অংশ গ্রহণ করে ১ম বা ২য় হতাম। কিন্তু, হাই স্কুলে ওঠার পর পারিবারিক কারণে নাচ, গান বন্ধ করে দিতে হয়। তখন থেকেই ইচ্ছে নিজে কিছু করব।

পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে কলেজে ভর্তির পর রেজাল্টে খুশি হয়ে আম্মু আব্বু আমাকে স্মার্ট ফোন কিনে দেয়। তারপর থেকে ফেসবুকে অনলাইন বিসনেস সম্পর্কে ধারণা পাই। নিজের আয়ত্তের মধ্যে থেকে কিছু করা ও নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা থেকে থেকে নিজেই হাতে তৈরি কাঠের গহনা তৈরি শেখা শুরু করি।

আমার কলেজ থেকে বৃত্তির পাওয়া টাকা থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে বিসনেস শুরু করি। এটি ছিল আমার প্রথম অনুপ্রেরণা । তারপর কাঠমুকুট - Kath Mukut নামে আমাকে ফেসবুকে একটি পেইজ খুললাম । দিনটি ছিল ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৯। তখন থেকেই, আমার মনে আমার কাজের মাধ্যমে নিজের পরিচয় তৈরি করার বাসনা জাগে । গুটিগুটি পায়ে চলছিল আমার উদ্যোগ।

২৭ অক্টোবর , ২০১৯ শে উই গ্রুপে জয়েন করি। আমি যেহেতু দেশী শাড়ি, গহনা নিয়ে কাজ করতাম তাই উই আমার জন্য বড় একটি প্লাটফর্ম । বিজনেস সম্পৃক্ত নানা রকম সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে থাকি। উই গ্রুপে নিয়মিত এক্টিভ থাকার ফলে আমার পরিচিতি গড়ে ওঠে।

বিভিন্ন জেলা থেকে আমি অর্ডার পেতে শুরু করি। এই অবস্থায় আমার কাজের আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই থেকেই আমার শাড়ির সাথে আমার সখ্যতা তৈরি হয়। আমার বাসা থেকে ৩০০ গজ দূরে রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি।

যেহেতু, রাজশাহী সিল্ক আমাদের জেলার বিখ্যাত পণ্য। উই গ্রুপ থেকে দেশী পণ্যের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে রাজশাহীর মেয়ে হিসেবে রাজশাহী সিল্ক শাড়ি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়। দেশবাসিকে রাজশাহী সিল্ক শাড়ি সম্বন্ধে অবগত করার জন্য আমি রাজশাহী সিল্ক ও মসলিন নিয়ে কাজ শুরু করি।

প্রথম দিকে চলার পথ মসৃণ না হলে ও টানা তিন মাস আমার সেল না হলে ও আমি হাল ছাড়ি নি। আমার পণ্যকে ভালোবেসে প্রচার করে গেছি। তারপর, আস্তে আস্তে অর্ডার আশা শুরু হলো তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি, আলহামদুলিল্লাহ।

বর্তমানে রাজশাহী সিল্ক, মসলিন ও হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করছি। এর প্রচার ও প্রসার বেড়েছে। নিজের দেশ ছাড়া বিদেশ থেকে আমার এই পর্যন্ত ১০ বার অর্ডার এসেছে । আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া, দুবাইতে কয়েকবার আমার পণ্য গেছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

আমার অধীনে ৩ জন কারিগর আছেন ও ১ জন ডেলিভারী ম্যান আছেন । যারা করোনা কালে অনলাইনে আমার উদ্যোগের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন। আমার উদ্যোগের মাধ্যমে আমি আরো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে চাই। নিজের সকল চাহিদা মেটানোর পর পরিবারকে সাপোর্ট করতে পারছি ও নিজের উদ্যোগের মাধ্যমে আমার নিজের একটি পরিচয় তৈরি হয়েছে এটা আমার কাছে খুব আনন্দের।

আমার স্বপ্ন রাজশাহী সিল্ক ও মসলিনের সোনালী অতীত ফিরে আসবে ও একদিন কাঠমুকুট একটি ব্র্যান্ড হবে। পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি তাই এত দূর আসতে পেরেছি । উইর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। উইর সুপার এক্টিভ হতে সব ধরণের সুযোগ পেয়েছি। যেমন - কোর্সেরা ট্রেনিং, WIFI ট্রেনিং এর সুযোগ পেয়ে বিনামূল্যে। উইর রাজিব স্যার ও নিশা আপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। উনারা উদ্যোক্তাদের জন্য বিশাল প্লাটফর্ম উইকে আমাদের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

এনএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top