রাজশাহীর বিপুল গণসমাবেশে মীর্জা ফখরুল ইসলাম

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না

নিজস্ব প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:০৪; আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২০

রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। ছবি: রাজ টাইমস

রাজশাহীর গণসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। তাই জনগণ একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না। এই লক্ষ্যে আগামী ১০ ডিসেম্বের ঢাকার গণসমাবেশে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শনিবার রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপি’র উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি মীর্জা ফখরুল ইসলাম এই ঘোষণা দেন। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহার এবং নির্দলীয় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের প্রত্যেক বিভাগে আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি প্রায় দিনব্যাপী এই গণসমাবেশ করে।

গণসমাবেশে মীর্জা ফখরুল বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। ঐ সময় হোটেল শেরাটনের সামনে একটি বাসে গানপাউডার দিয়ে একসঙ্গে ১১ জনকে হত্যা করেছিল। সেসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। আর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার ঐ ব্যবস্থা পাল্টে দিলো। কেননা কিছুদিন পর তারা টের পেলো, জনগণ তো তাদের পছন্দ করছে না। তাই তারা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বদলে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করলো। কিন্তু আমরা বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা এই দেশে কোন নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেড়া করেছো, সেই সংবিধান? তিনটা অনুচ্ছেদ রেখেছে, যার অধীনে একটা কথাও বলা যাবে না। সেই সংবিধান চলতে পারে না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. এরশাদ আলী ঈশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু ও হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল হক মিলন, সাবেক এমপি এড. নাদিম মোস্তফা, বিভাগীয় কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুল হক চন্দন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠান্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দুও সরেননি। খেয়ে না খেয়ে কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? একটি মাত্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান।’ তিনি বলেন, রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। পাশেই শুয়ে আছেন শাহমখদুম সাহেবের ভূমি এটা।

এটা সেই জায়গা যেখানে মানুষ ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করেছে। বিদ্রোহ করেছে। অনেক বরেণ্য মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটিতেই তারা গড়ে উঠেছেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জ্জোহা নিজের বুকের রক্ত দিয়ে দিয়েছিলেন। এইরকম অনেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এরমধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মুল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। বরং আরো উত্তাল হয়ে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোন রাজনীতি দল নেই। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে, সাধারণ মানুষকে গরীব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার জন্য তাদের জেলখানায় নেয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে কয়েকটা গায়েবি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকেও ধ্বংস করে দিয়েছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা এই সরকারের সুবিধাভোগী, চাঁদাবাজি, লুটপাটে যুক্ত তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা এর পরিবর্তন চায়। তিনি বলেন, এই সরকারের নির্বাচন নিয়ে কদিন আগে জাপানের রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তাতে তাদের লজ্জা হয় না। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের টাকা লুট করে মেগাপ্রকল্পের নামে বিদেশে টাকা পাচার করছে। তারা জনগণের ভয় কেটে যাওয়া দেখে নিজেরা ভীত হয়ে পড়েছে।

তারা এখন আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, গণতন্ত্র ফিরে আসলে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। এজন্য এই গণতন্ত্র মুক্তির লড়াইয়ে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। বিএনপির উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এখন একটাই পথ-পরিবর্তন। এই পরিবর্তন হবে রাজপথের আন্দোলনে। তিনি আগামী দিনের প্রতিটি কর্মসূচিকে সফল করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এনএ



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top