অচল রাকসু নয়, দরকার সক্রিয় প্রতিনিধি পরিষদ’-নেতাদের কণ্ঠে প্রত্যাশা

রাবি প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০২৫ ২০:০৪; আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ০৩:৫৮

- ছবি - ইন্টারনেট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক ড.সালেহ্ হাসান নকীব গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, পাঁচ মাসের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচন আয়োজন করবেন। সেই ঘোষনার সময়সীমার নয়মাস পার হয়ে গেলেও দেখা যায়নি কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ।

সর্বশেষ, ৩০ জুন রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেই তা বাস্তবায়িত হয়নি।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে রাকসু নির্বাচন নিয়ে গরম হাওয়া বইছে ক্যাম্পাসে। রাকসুর রোডম্যাপ, রাকসুর নির্বাচন কমিশন, তফসিল, নির্বাচনের তারিখ সর্বোপরি রাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচিতে সরগরম রয়েছে ক্যাম্পাস।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসুর টাইমলাইন ঘোষণা করলে সে অনুযায়ী শুরু হয় রাকসু চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচি। সেই থেকে হলে খাবারের ফাঁকে কিংবা টুকিটাকির চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠা আলাপে একটাই প্রশ্ন, ‘রাকসু কবে’?

অবশেষে ১৬ এপ্রিল রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জানানো হয়, জুন মাসের ৩য় বা ৪র্থ সপ্তাহে রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন, রাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সংগঠনের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বাকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ইত্যাদি কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি।

পেছনে ফেলে আসা রাকসুর অচলাবস্থার ইতিহাস

সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিলো ১৯৮৯ সালে। এর পর ৩৬ বছর ধরে রাকসু নির্বাচন হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর মধ্যে পাকিস্তান আমলে হয়েছে ১০ বার আর স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র ৬ বার। অথচ ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতিবছর রাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রথম রাকসু ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্র ইউনিয়নের মনিরুজ্জামান মিয়া। সর্বশেষ ভিপি ছিলেন ছাত্রদলের রিজভী আহমেদ।

কেমন রাকসু চান ছাত্রনেতারা ?

কেমন রাকসু চান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা। এমন প্রশ্নে যৌক্তিক কিছু মতামত উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। চলুন দেখা যাক রাজনৈতিক নেতাদের ভাবনায় রাকসু।

একটা সুস্থ ক্যাম্পাসের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, একটা সুস্থ ক্যাম্পাসের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু বিভিন্ন মহল গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ করে রেখেছে। যা কখনোই কাম্য নয়। জুলাই বিপ্লবের পর রাকসু হওয়ার যখন প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখনো সেই মহলগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

আমি যেটা দেখলাম রাকসু বিরোধী মহলগুলো ক্যাম্পাসে 'ডরম্যান্ট কন্ডিশনে' স্হায়ীভাবে থেকে যায়। যত ঝড় ঝঞ্ঝা বিপ্লব হোক এদের কেউ তাড়াতে পারে না।রাকসু নিয়ে কথাবার্তা চললেই এরা তা বন্ধ করতে পূর্ণোদ্যমে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

এই ডরম্যান্ট কন্ডিশনের কীটগুলোর বিপরীতে বিপ্লবী প্রশাসনকে 'অ্যান্টিবায়োটিকের' ভূমিকা পালন জরুরী ছিলো। কিন্তু তাদের ভূমিকা 'গোবেচারা প্যারাসিটামলের' মতো।

দখলদারিত্বমুক্ত ও ভয়ের রাজনীতি থেকে মুক্ত একটি রাকসু চান ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী। যেখানে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু সহিংসতা থাকবে না। তিনি বলেন, 'আমি চাই এমন রাকসু যেখানে ছাত্রসমাজ নিজের প্রতিনিধি নিজেই বেছে নিতে পারবে। দখলদারিত্বমুক্ত ও ভয়ের রাজনীতি থেকে মুক্ত একটি রাকসু, যেখানে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু সহিংসতা থাকবে না।

ছাত্রদল এমন একটি গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বমূলক ও সক্রিয় রাকসু চায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীর অধিকার, মতামত ও প্রয়োজনকে মর্যাদা দিয়ে কাজ করবে'।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘রাকসু নিয়ে বর্তমান অবস্থা হলো, রাকসুর তফসিল ঘোষণা করা হয়নি এখনও পর্যন্ত। বিভিন্ন কারণে রাকসুর তফসিল ঘোষণা আটকে আছে। তফসিলের সবকিছুই রেডি কিন্তু কোনো এক কারণে তফসিল ঘোষণা করছে না। তাই নির্বাচন তফসিল দ্রুত ঘোষণা করা দরকার এবং গঠনতন্ত্র নিয়ে যে সংশোধনীগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলা সংশোধন করে পূর্ণাঙ্গ একটা গঠনতন্ত্র বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রাকসু হলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে'।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ধারাটি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়কে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্তি এবং শিক্ষার্থীদের যথাযথ অধিকার আদায়ের মাধ্যম রাকসু। দীর্ঘদিন ধরেই রাকসু নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসছি।

রাকসু নির্বাচন হলে ছাত্রদের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো ভালোভাবে উঠে আসবে৷ আগের প্রশাসন গুলো সরকারের ইশারা ইঙ্গিতে চলতো। কিন্তু, আমার মনে হয় বিপ্লবের পরে যে প্রশাসন এসেছে তারা রাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য বসে আছে'।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top