সার্টিফিকেট শাখা যেন ছাত্রদের হয়রানি কেন্দ্র

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০২২ ০৪:২৬; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ২০:২২

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সার্টিফিকেট শাখা নথিপত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। তবে রুটিন মাফিক মধ্যাহ্ন বিরতি দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হলেও তিনটার পরও দপ্তরে পাওয়া যায়না অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতার অভাবেই এমনটি হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর সার্টিফিকেট শাখার অনেক কর্মকর্তার কক্ষে চেয়ার ফাঁকা পরে আছে। এমনকি কোনো কোনো কর্মকর্তা তাদের নিজস্ব কাজের জন্য অফিস টাইমে বাসায় চলে যাচ্ছেন। এতে অনেক শিক্ষার্থী কর্মকর্তাদের না পেয়ে কাজ শেষ না করেই ফিরে যাচ্ছে।

আকরাম হোসাইন নামের এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমার সার্টিফিকেটের খোঁজে আজ সাতদিন ধরে ঘুরছি কিন্তু সার্টিফিকেট শাখা কোনো সন্ধান দিতে পারছেন না। আমার সার্টিফিকেটের নিবন্ধন করা ফাইলটিও তারা খুঁজে পাচ্ছে না। একজন আরেক জনের কাছে পাঠাচ্ছে এবং বলছে আজকে না কালকে আসুন এমন সব কথা। এছাড়া নিয়মিত তাদেরকে অফিস কক্ষে পাচ্ছি না যে কারণে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হচ্ছে। আমি তাদের অব্যবস্থাপনায় হতাশ। এমন সব ভোগান্তির দ্রুত সমাধান চাই আমি।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, আজকে সার্টিফিকেটের জন্য এতোদুর থেকে জার্নি করে আসছি কিন্তু সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছি না। শাখা দপ্তরের লোকদেরকে নিয়মিত ডেস্কে পাইনি যার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কাছে যেতে হলে দু-ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় এবং দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে যখন তাদের কাছে যাই দু-এক কথা বলেই শেষ করে দেয়, যার কারণে কিছুই বুঝতে পারি না।

ভুক্তভোগী সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-মাসুদ বলেন, সার্টিফিকেট তুলতে কর্মক্ষেত্র ঢাকা থেকে এসেছি কিন্তু আজকে চারদিনেও সার্টিফিকেট হাতে পায়নি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এতো হয়রানি কেন থাকবে? আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী এরকম হয়রানির শিকার যা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে তিনি জানান। এ ব্যাপার জানতে চাইলে শাখার দপ্তরের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো.আলমগীর হোসেন সরকার বলেন, সার্টিফিকেট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকাংশই স্থানীয় এলাকার, তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যেই তাদের বাসস্থান। সেই জন্য অধিকাংশই মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য বাসায় চলে যায়। এই যাওয়া-আসায় অফিসে ফিরতে দেরি করে ফেলেন তাঁরা। নিজস্ব কাজের জন্য অনেকেই ছুটি নিয়ে যায়, তবে শতভাগ যে আমার কাছে ছুটি নিয়ে যায় তাও কিন্তু না।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কর্মকর্তা এক হয়না। যাদের সম্পর্কে আমার কাছে অভিযোগ আসে আমি তাদেরকে নিয়ে বসি, মিটিং করি, তাদেরকে বিনয়ী হওয়ার আহ্বান করি। শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়াই আমাদের মূল কাজ এটা অনেকে ভুলে যায়। শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খারাপ আচরণ করলে তারা যেন আমার কাছে কমপ্লেন করে, আমি সাথে সাথেই পদক্ষেপ নিবো বলেন জানান।

শিক্ষার্থীদের হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্টিফিকেট শাখাকে আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। আমরা এ শাখাটিকে অটোমেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং সেটা হলে শিক্ষার্থীদের এতো হয়রানির শিকার হতে হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল- ইসলাম বলেন, সার্টিফিকেট দপ্তরের সমস্যাগুলো আমরা আইডেন্টিফাই করছি। সেবা নিতে এসে কোন শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা যেন সেবাবঞ্চিত বা হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি।

কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন শিক্ষার্থীদের সেবা প্রধানের জন্য। সেবাপ্রার্থীদের সাথে যেন যথাযথ আচরণ করা হয় সে বিষয়ে আমরা দাপ্তরিক নির্দেশনা দিয়েছি।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top