কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইসির শাস্তির সিদ্ধান্ত আটকে আছে সচিবালয়ে

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১০; আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ২৩:৫৭

ফাইল ছবি

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইসি শাস্তির সিদ্ধান্ত জানালেও তা কার্যকরে কোন ব্যবস্থা নেয় নি ইসি সচিবালয়। খবর যুগান্তরের।

কমিশন উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, একজন এডিসিসহ ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত জানায় ১ ডিসেম্বর । ওই সিদ্ধান্তের ৫ দিন পার হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি ইসি সচিবালয়।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে ইসির সিদ্ধান্ত কার্যকরে চিঠিও দেয়নি। উলটো মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায় ওইসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘পদ্ধতিগতভাবে’ কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছে ইসি সচিবালয়।

ইসি সচিবালয়ের এমন পদক্ষেপে উষ্মা প্রকাশ করেছে কমিশন। ইসি শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া এ উপনির্বাচন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে খসড়া তালিকা প্রকাশের দিন পেছানো হচ্ছে। ২ জানুয়ারি এ তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের তারিখ ২ মার্চ ঠিক থাকছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার কমিশনের ১০ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার এ সভায় চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে যাদের কমিশন শাস্তি দিয়েছেন, ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাল (আজ বুধবার) থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া শুরু হবে। এছাড়া তারা ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দায়িত্ব পাবেন না।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় পেছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, গাইবান্ধা-৪ উপনির্বাচনে ৪ জানুয়ারি ভোট হবে। ওই ভোটের আগে খসড়া প্রকাশ করা যায় কিনা-তা নিয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি কম থাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় কিছুটা হেরফের হতে পারে। এ কারণে খসড়া তালিকা প্রকাশের সময় কিছুটা পেছাতে পারে। তবে সেটা কমিশন সভার কার্যবিবরণী পাওয়ার পর বলতে পারব।

আরও জানা গেছে, ওই বৈঠকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিগত ৯টি কমিশন সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম ৮টি সভায় ১৫৭টি সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। এর মধ্যে ১৫২টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকি ৫টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকে পেজ খোলা হয়েছে। ওইসব পেজে ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায় হয়, কমিশন সভায় দুটি এজেন্ডা ছিল। প্রথমত, বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের উপনির্বাচন এবং দ্বিতীয়ত, কমিশন সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন। প্রথম এজেন্ডার কার্যপত্রের এক জায়গায় রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। আরেক জায়গায় ভোটের তারিখ ঘোষণার পর দায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। কার্যপত্রে এমন নির্দেশনা চাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। বৈঠকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত ফাইলে দেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত জানার পরও কীভাবে কার্যপত্রে আবারও নির্দেশনা চাওয়ার কথা উল্লেখ করা হলো-সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

১ ডিসেম্বর ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ওই সময়ে তিনি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম অনিয়ম প্রতিরোধের চেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ৫ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইসি সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং এডিসি ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসি সচিব চিঠি দেবেন। আর ৯৪ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালন করায় ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হবে। সিইসি বলেছিলেন, এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত না করলে ওই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬(২) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের উপরোক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো মন্ত্রনালয় বা সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত চিঠির খসড়াও তৈরি করা হয়নি। ওই খসড়া কমিশনের অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করবে নিজ নিজ বিভাগ।

ইসির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন : ইসি সূত্র জানায়, কমিশন সভায় ইসির বিগত ৯টি সভার বাস্তবায়ন প্রতিবেদন তোলা হয়। এতে বলা হয়, নবম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলমান রয়েছে। আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া প্রথম থেকে অষ্টম সভায় ১৫৭টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১৫২টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকি ৫টি চলমান রয়েছে। এ পাঁচটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি হচ্ছে-আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো। এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্প পরিচালক বৈঠকে জানান, ইভিএম বিষয়ে প্রচারের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটকে পেজ খোলা হয়েছে এবং কন্টেন্ট আপলোড করা হচ্ছে। দুটি টিভিসি, দুটি অ্যানিমেশন ও ৯টি নাটক নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান আছে; যা জানুয়ারিতে সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনের জন্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top