কেনা হয়েছে ২৮টি ফ্রিজিং কোচ ক্রয়, কী কাজে লাগবে জানা নেই রেলের
রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৩; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৬

কেনা হয়ে গেছে রেলের ২৮টি ফ্রিজিং কোচ আর খরচ হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা, অথচ কী কাজে লাগবে জানা নেই কর্তৃপক্ষের। প্রায় তিন'শ কোটি ব্যয়ের এ প্রকল্পের আওতায় কেনা হয়েছে ৯৭টি লাগেজ ভ্যানও। উদ্দেশ্য কৃষিপণ্য পরিবহন করা। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, ঢাকার বাজারের সঙ্গে ট্রেনের শিডিউল মিল না থাকায় শাক-সবজি পরিবহনে আগ্রহী হবেন না কেউ। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান জানান, সমীক্ষা ছাড়াই নেয়া হয়েছে প্রকল্প। আর কেনার পর রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সফল হওয়ার উপায় খোঁজা হচ্ছে।
করোনাকালীনে ঢাকায় খাদ্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পার্সেল ও কৃষিট্রেন চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেল ছাড়া বাকি সব পরিবহন সীমিত আকারে চললেও কৃষকরা সাড়া দেয়নি রেল সেবায়। যে দু'একবার চলেছে কৃষিট্রেন তাতে খাদ্যের পরিবর্তে ঢাকায় এসেছে কয়েক মন ভিন্ন পণ্য। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় রেলের কৃষিসেবা।
এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য চীন থেকে ৩শ কোটি টাকায় ৯৭টি লাগেজ ভ্যান এবং কৃষকের উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধের মত হিমায়িত পণ্য ঢাকায় আনতে ২৮টি ফ্রিজিং কোচ কিনেছে রেলওয়ে। যা সংযুক্ত করা হবে আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হিমাগার ট্রেনে বাড়তি খরচ ও ঢাকার বাজারের সঙ্গে রেলের শিডিউল মিল না থাকায় লাগেজভ্যানে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী হবে না কেউ।
কারওয়ান বাজারের এক আড়তদার ও ব্যবসায়ী জানান, যেমন ধরুণ রংপুর থেকে রাতে সিডিউল মেনে ট্রেন ছাড়ল ভোরে ঢাকায় পৌঁছাল, সেখান থেকে (কমলাপুর) এ বাজারে মালামাল আসতে সকাল ৯টা বেজে যাবে, তখন এই মালামাল বিক্রি হবে না।
ব্যবসায়ী জানান, এসব ট্রেন শুধু কৃষিপণ্য ও হিমায়িত খাদ্যপণ্য পরিবহন করে সফলতা পাবে কিনা সেটা নিয়ে আমরাও সন্দিহান। আরেক ব্যবসায়ী জানান, কৃষিপণ্য পরিবহন করে লাভ করতে পারবে না ট্রেন। এই করোনা মহামারির সময়েই পারেনি এখন তো আরও পারবে না। করোনার সময়ে তো গাড়ি বন্ধ ছিল। ওই সময়টাতে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এ ট্রেন ব্যবহার করেননি।
কারওয়ান বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, কৃষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবজি উৎপাদন করছেন, সেখান থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাজারে এনে আবার রেলস্টেশনে আনবে, তারপর আবার ঢাকা আনার পর কমলাপুর থেকে বাজারে আনবে; এতে অনেক খরচ পড়বে। কেউ এটা করতে চাইবে না।
আর রেলের বাণিজ্য বিভাগের কর্মীরা বলছেন, কৃষি কিংবা হিমায়িত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা নেই রেলের। বাড়বে লোকসানের পাল্লা।
রেলের বাণিজ্য বিভাগের কর্মীরা জানান, যেভাবে রেল আশা করেছিল, মানুষের ফসল ও কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছাবে সেভাবে তারা তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। মালামাল না থাকার কারণে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান সময় সংবাদ বলেন, বাজার ও চাহিদার সমীক্ষা ছাড়াই নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প।
তিনি আরও বলেন, হিমায়িত খাদ্য যেটাকে ফ্রিজিং বলা হয়, এটা (ট্রেন) তো এক দরজা থেকে আরেক দরজা পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দিতে পারবে না। কোনোভাবেই এটা ব্যবহার করতে পারবে না; কারণ এটা পরিচালনায় যে খরচ আসবে সেটা রেলের জন্য টেকসই হবে না। সুতরাং সেগুলো ফেলে রাখতে হবে।
ফ্রিজিং কোচ কেনার পর রেলওয়ে এখন বলছে, সফল হওয়ার উপায় খুঁজছেন তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী (অপারেশন) বলেন, দরজা থেকে দরজা পর্যন্ত সেবাটা যদি ঠিক করতে পারতাম বা পারি এবং মার্কেটিংটাকে সেভাবে সাজিয়ে নিতে পারি তাহলে এটার ভবিষ্যৎ আছে। এটা নিয়ে আমরা ভাবছি, কীভাবে কী করা যায়।
অল্পদিনের মধ্যেই কোল্ডস্টোরেজ লাগেজভ্যান দেশে আসার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: