ঋণ খেলাপীতে ৯ ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার কোটি টাকা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২ ১৭:০১; আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:০৭

ফাইল ছবি

ঋণ খেলাপী মাত্রাতিক্ত ভাবে বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে ব্যাংকগুলো। এমনকি নতুন করে বকেয়া কিস্তি পরিশোধে ছাড় এবং পুনঃতপশিলের সুযোগ দেয়ার পরও ব্যাংক খাতে ব্যাপকহারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতই ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। খবর শেয়ার বিজের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। সার্বিকভাবে জুন শেষে পুরো ব্যাংক খাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতির পরিমাণ ১৩ হাজার ২১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত মার্চ শেষে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ৯ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। আর বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।

২০২২ সালের জুন শেষে দেশে বিতরণ করা মোট ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, খেলাপি ঋণ এমনি ব্যাংক খাতের সমস্যা। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ছাড় দেয়া। এ ছাড়ের কারণে অনেকে ভাবছেন, না দিলে চলবে। তাই দিন দিন খেলাপি ঋণ লাগামহীন বাড়ছে। খেলাপি বাড়ার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে যায় আমানত। ব্যাংক খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্ন বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে জুন শেষে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছেÑরাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৯৬২ কোটি ১০ লাখ ও জনতা ব্যাংকের ৬৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে বেসরকারিগুলোর মধ্যে জুন শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক সাত হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

২০২২ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৬ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। ফলে সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে, তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ (খেলাপি) ঋণে পরিণত হলে তাতে ব্যাংক যেন আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বিধান রয়েছে।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top