এসআইয়ের কোটিপতি স্ত্রী
রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০২১ ১৮:৩৬; আপডেট: ৭ মে ২০২৫ ০৬:৪০

চট্টগ্রাম শহরে ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক তিনি। সীতাকুণ্ডে জমি আছে, রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। আয় করেছেন কোটি টাকা। গোলজার বেগম নামের এক নারীর এই সফলতার পেছনে রয়েছে তাঁর পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী। নাম মো. নওয়াব আলী। তিনি এখন ঢাকায় সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) পদে আছেন।
নওয়াব আলীর নামেও ফ্ল্যাট ও জমি আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে তাঁরা অর্জন করেছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।
দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেন নওয়াব আলী। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার মালিক সাজিয়েছেন স্ত্রী গোলজারকে। মাছ চাষ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ আয় টাকা করেছেন বলে কাগজপত্রে দেখালেও বাস্তবে মাছ চাষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারপরও মাছ চাষ করা হয় মর্মে কর কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এসআই নওয়াব আলী, তাঁর স্ত্রী গোলজার বেগম, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে আসামি করে আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দিয়েছে।
এসআই মো. নওয়াব দাবি করেন, তাঁকে হয়রানি করতে দুদক মিথ্যা মামলা করেছে। স্ত্রীর মাছ চাষের আয়ে তাঁর সব অর্জন।
নওয়াব আলীর স্ত্রী গোলজার বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব। তারপরও দুদক দুর্নীতি মামলার আসামি করেছে।’
দুদক তদন্তে পেয়েছে, নওয়াব আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের কেকানিয়া এলাকায়। সেখানে ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন নিজের নামে। স্ত্রী গোলজারের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুরে ৩৫৪ শতক জমি, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায় পার্কিংসহ ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই এলাকায় ৪ শতক জমি রয়েছে। গোলজারের নামে একটি মাইক্রোবাসও রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা নওয়াব আলী ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী ও নিজ নামে ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি কিনেছেন। এগুলো জায়েজ করার জন্য স্ত্রীকে মৎস্যচাষি দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
আলী আকবর , মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক
দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে গোলজার দাবি করেছেন, তিনি মিরসরাইয়ের পশ্চিম ইছাখালীর মদ্দারহাটে হারেস আহমদ, আমিনুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, শওকত আকবরসহ সাতজনের সঙ্গে চুক্তি করে একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, হারেস আহমদসহ যেসব ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি দেখানো হয়েছে, তাঁরা ২০ বছর আগে মারা গেছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা বাবুল চৌধুরী বলেন, যাঁদের জায়গায় জলমহাল দেখানো হয়েছে, সেটা নাল জমি। এখানে কখনো মাছ চাষ হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আলী আকবর বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা নওয়াব আলী ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী ও নিজ নামে ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি কিনেছেন। এগুলো জায়েজ করার জন্য স্ত্রীকে মৎস্যচাষি দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, আদালত দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আগামী ৬ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: